পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তানের ১৬টি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, এই চ্যানেলগুলোতে উসকানিমূলক এবং সাম্প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছিল, যা দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছিল। নিষিদ্ধ হওয়া চ্যানেলগুলোর সম্মিলিত সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রায় ৬৩ মিলিয়ন, যা তাদের প্রভাবের মাত্রা স্পষ্ট করে।
ভারতীয় সরকারের অভিযোগ, এসব ইউটিউব চ্যানেল ভারতীয় সেনাবাহিনী, নিরাপত্তা সংস্থা এবং দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছিল। বিশেষ করে পহেলগাঁও হামলার পর যখন দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে, তখন এই চ্যানেলগুলো বিভ্রান্তিকর তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা করে। হামলায় ২৫ জন ভারতীয় পর্যটক ও একজন কাশ্মিরি নাগরিক প্রাণ হারান। এই নির্মম ঘটনার পর পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলার উদ্দেশ্যে নানা ধরনের উস্কানিমূলক ভিডিও ও সংবাদ প্রচার করা হচ্ছিল।
নিষিদ্ধ হওয়া ইউটিউব চ্যানেলগুলোর তালিকায় রয়েছে পাকিস্তানের বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম ডন নিউজ, সামা টিভি, আরি নিউজ, জিও নিউজ ও বোল নিউজ। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত চ্যানেলগুলোর মধ্যে রয়েছে রফতার, সুনো নিউজ, ইরশাদ ভাটি, আসমা শিরাজি ও উমর চিমার মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের প্ল্যাটফর্ম। এমনকি পাকিস্তানের সাবেক তারকা ক্রিকেটার শোয়েব আখতারের ইউটিউব চ্যানেলও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সরকারি সূত্রে আরও জানা গেছে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভারত চায় দেশের ভেতর কোনো ধরনের বিদেশি উস্কানি বা অপপ্রচার প্রতিরোধ করতে। বর্তমানে ভারতে বসে সরাসরি পাকিস্তানের কোনো সংবাদমাধ্যম বা ব্যক্তির ইউটিউব চ্যানেল দেখা যাবে না। এর মাধ্যমে ভারত সরকার স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছে যে, দেশের নিরাপত্তা এবং সামাজিক সম্প্রীতির সাথে আপস করা হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়ক, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যমের দায়িত্বশীল ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিকেও সামনে আনছে। অনেকের মতে, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ভুয়া তথ্য বা প্রপাগান্ডা খুব দ্রুত সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা সমাজে বিভাজন তৈরি করতে পারে।
সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের পর প্রশ্ন উঠেছে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের সীমা এবং স্বাধীনতার ভারসাম্য কীভাবে রক্ষা করা হবে। তবে আপাতত ভারতীয় প্রশাসন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, দেশের সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে যেকোনো ধরনের উস্কানিমূলক প্রচারণা বরদাস্ত করা হবে না।