জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সোমবার সকালে জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতাদের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তিনি এ কথা জানান।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “গত ৫৩ বছর ধরে এ দেশের মানুষ যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে আসছে, সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের প্রয়োজন একটি জাতীয় সনদ, যেখানে স্পষ্টভাবে ক্ষমতার বিন্যাসের পরিবর্তন ও রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা থাকবে। এ আলোচনার মূল উদ্দেশ্যই হলো—সমষ্টিগতভাবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করা।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের ভিত্তিতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তোলার জন্য এই আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
বৈঠকে অংশগ্রহণ করে গণঅধিকার পরিষদের নেতারাও তাঁদের অবস্থান তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, গণতান্ত্রিক চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়াসকে সমর্থন করে এবং পরিবর্তনের জন্য একটি সুসংগঠিত রূপরেখা প্রণয়ন জরুরি।
উল্লেখ্য, গণঅধিকার পরিষদ বাংলাদেশের একটি উদীয়মান রাজনৈতিক দল, যা ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়ের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা রেখে আসছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর, ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর গণঅধিকার পরিষদ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন লাভ করে, যা তাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও সুসংগঠিত ও সক্রিয় ভূমিকা পালনের সুযোগ এনে দেয়। দলটির নির্বাচনী প্রতীক হলো ট্রাক, যা প্রতীকীভাবে দৃঢ়তা, অগ্রযাত্রা ও জনগণের স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতিকে প্রতিনিধিত্ব করে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং গণঅধিকার পরিষদের এই বৈঠক রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। উভয় পক্ষই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, দেশবাসীর বহুদিনের স্বপ্ন—একটি স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা—বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবে।
রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই হবে তাদের মূল লক্ষ্য। এই প্রচেষ্টা দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে আরও গতিশীল করবে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই ভিত্তি নির্মাণ করবে বলে সবাই আশাবাদী।