দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে সংসদ ও প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চার বছরে নির্ধারণের প্রস্তাবের সঙ্গে দলটি দ্বিমত প্রকাশ করেছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান পাঁচ বছরের মেয়াদই যুক্তিযুক্ত এবং তা অব্যাহত রাখা উচিত।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতের প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের বিরতিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এ বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি জানান, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং আলোচনাকে ফলপ্রসূ বলেও অভিহিত করেন। ডা. তাহের বলেন, “আমরা মনে করি, আলোচনা ইতিবাচক হচ্ছে। অনেক বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, তবে কিছু বিষয়ে এখনো আরও আলোচনা প্রয়োজন। আজকের মধ্যে সব আলোচনা শেষ নাও হতে পারে।”
জামায়াতের প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও নুরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ।
বৈঠকের পূর্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা সবাই মিলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজ করছি। এটি কোনো একক রাজনৈতিক দলের উদ্যোগ নয়, বরং গোটা জাতির আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। আমাদের লক্ষ্য এক এবং একসঙ্গে কাজ করেই সফলতা অর্জন সম্ভব হবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা দ্রুত একটি জাতীয় সনদে উপনীত হতে চাই। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের পেছনে আছে আমাদের মহান বীর শহীদদের আত্মত্যাগ। আমরা যেন কোনোভাবেই এই সুযোগ হাতছাড়া না করি।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক করা। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের মাধ্যমে দেশের আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে আরও সুসংহত এবং প্রতিনিধিত্বমূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে মেয়াদ সংক্রান্ত বিষয়ে ভিন্নমত থাকলেও সার্বিকভাবে জামায়াতে ইসলামী কমিশনের অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে।
আলোচনা চলমান রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো আশা প্রকাশ করেছে, পরবর্তী বৈঠকগুলোতে বাকি বিষয়গুলিতেও একটি সুস্পষ্ট ঐকমত্য গড়ে উঠবে। জাতির জন্য একটি শক্তিশালী ও প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।