বিশ্বের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম শ্রদ্ধেয় নেতা পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় উপস্থিত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার তিনি সেখানে প্রবেশ করেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
অধ্যাপক ইউনূসের এই সফরের পূর্বে, শুক্রবার তিনি কাতারের রাজধানী দোহা থেকে রোমে যান। ভ্যাটিকান সিটির এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা, ধর্মীয় প্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে একত্রিত হন। পোপ ফ্রান্সিসের জীবন ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর উপস্থিতি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ এপ্রিল ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মের সর্বোচ্চ নেতা পোপ ফ্রান্সিস মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি ২০১৩ সালে রোমান ক্যাথলিক চার্চের ২৬৬তম পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পোপ ফ্রান্সিস ইতিহাসে বিশেষ স্থান অধিকার করেন, কারণ গত ১০০০ বছরে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ইউরোপের বাইরের কোনো অঞ্চল থেকে এসে ক্যাথলিক ধর্মের সর্বোচ্চ পদে আসীন হন। আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে জন্মগ্রহণকারী পোপ ফ্রান্সিস তাঁর সাদামাটা জীবনধারা, দরিদ্রদের প্রতি সহমর্মিতা এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকার জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
পোপ ফ্রান্সিস তাঁর পুরো পন্টিফিকেটে মানবাধিকার, পরিবেশ রক্ষা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। তিনি বিশ্ববাসীকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন দয়া, সহানুভূতি এবং ভালোবাসার চর্চা করতে। তাঁর মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ শোকাহত হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন খ্যাতনামা বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা, তাঁর এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা ও বিশ্বজনীন সংহতির বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূস বরাবরই বৈশ্বিক ন্যায়বিচার, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং মানবতার উন্নয়নের পক্ষে কাজ করে আসছেন। পোপ ফ্রান্সিসও এসব মূল্যবোধের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। এই কারণে, তাঁদের মধ্যকার দৃষ্টিভঙ্গির মিল বিশ্বশান্তি ও মানবতার কল্যাণে এক অনন্য সেতুবন্ধন গড়ে তুলেছিল।
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ছিল এক গভীর সম্মান ও আবেগময় পরিবেশের প্রতিফলন। সেখানে অধ্যাপক ইউনূসের অংশগ্রহণ শুধু বাংলাদেশের পক্ষ থেকেই নয়, বরং বিশ্বের শান্তিকামী জনগণের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পোপ ফ্রান্সিসের স্মরণে আয়োজিত এই আয়োজন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মানবতার বার্তা বহন করে চলবে।