রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে কাতারের রাজধানী দোহায় এক উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কাতারের প্রতি মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন না করা হলে পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদে হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা তহবিল ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং নিরাপত্তা সংকট আরও গভীর হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত, টেকসই ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের পথ প্রশস্ত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে কাতারসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারদের আরও কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনায় ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে ৮ দফা সুপারিশ পেশ করেন।
প্রথমত, তিনি মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, আশ্রয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টেকসই অর্থায়ন অপরিহার্য।
দ্বিতীয়ত, ক্যাম্পে বসবাসরত শিক্ষিত ও দক্ষ রোহিঙ্গাদের জন্য জীবিকার সুযোগ তৈরি করার কথা বলেন তিনি। এতে তারা আত্মনির্ভর হতে পারবে এবং দীর্ঘমেয়াদে পরনির্ভরশীলতা কমবে।
তৃতীয়ত, ভাসানচরের উন্নয়নে কাতারের অংশগ্রহণ চেয়েছেন তিনি। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ও পানীয়জলের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
চতুর্থত, তিনি শিশু ও কিশোরীদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। বাংলা ভাষাভিত্তিক কারিকুলামের পাশাপাশি ইংরেজি ও বার্মিজ ভাষার শিক্ষা চালুর প্রস্তাব দেন।
পঞ্চমত, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় পরিবেশ সুরক্ষায় কাতারকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বৃক্ষরোপণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
ষষ্ঠত, কক্সবাজার ও ভাসানচরের অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সপ্তমত, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মূল চাবিকাঠি হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেন। জাতিসংঘ ও অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্রের মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
অষ্টমত, রোহিঙ্গা নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলেন তিনি, যাতে তারা নিজস্ব সমস্যার সমাধানে নেতৃত্ব দিতে পারেন।
তিনি আরও জানান, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হবে। এই সম্মেলনে কাতারের সক্রিয় সহায়তা প্রত্যাশা করেন তিনি।
এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথ সুগম হতে পারে।