ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে তৃতীয় ধাপে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বানৌজা সমুদ্র অভিযান’। জাহাজটি ৫৫ সদস্যবিশিষ্ট উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তাকারী দল নিয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশে ফিরে আসে। একই সঙ্গে, বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারে আটক থাকা ২০ জন বাংলাদেশি নাগরিককেও নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, মিয়ানমারে প্রেরিত ১২০ টন ত্রাণসামগ্রী যথাযথ প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর শেষে ১৩ এপ্রিল ‘বানৌজা সমুদ্র অভিযান’ ইয়াঙ্গুন বন্দর ত্যাগ করে। এর আগে গত ৩০ মার্চ ও ১ এপ্রিল সশস্ত্র বাহিনী, অসামরিক চিকিৎসক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ৫৫ সদস্যের একটি দল মিয়ানমারে পাঠানো হয়। তারা ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসাবশেষ অপসারণ, আহতদের উদ্ধার এবং চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। উদ্ধারকারী দলের কার্যক্রম শেষে সবাই নিরাপদে দেশে ফিরে এসেছে।
এই মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের প্রতি বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। মিয়ানমার সরকার ও সেখানকার জনগণ বাংলাদেশের সহানুভূতি ও সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে আটক থাকা ২০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মানবপাচারের শিকার হয়ে তারা উন্নত দেশে চাকরির প্রলোভনে পড়ে মিয়ানমারে পাড়ি জমায়। কিন্তু অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তারা আটক হয় এবং কিশোরদের সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে চলছিল।
মিয়ানমারে ভূমিকম্প-পরবর্তী ত্রাণ মিশনের সুযোগে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে এই আটকদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। উভয় দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমে আটকদের মুক্তি ও দেশে ফেরা সম্ভব হয়। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, মিয়ানমার সরকার ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
ফিরিয়ে আনা নাগরিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এই উদ্যোগ শুধু মানবিক দায়িত্ব পালনের একটি দৃষ্টান্ত নয়, বরং এটি আঞ্চলিক শান্তি, সহযোগিতা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের এক উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।