মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২.৩ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করেছেন, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়টি সরকারের কিছু নির্দিষ্ট নীতিমালা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। রয়টার্স, আল জাজিরা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ এই দাবিকে একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার এক চিঠিতে লিখেছেন, শিক্ষা দপ্তরের সাম্প্রতিক দাবিগুলো যদি মানা হয়, তবে তা একটি বেসরকারি ও স্বশাসিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে হার্ভার্ডের মৌলিক মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করবে। তিনি বলেন, শিক্ষা, গবেষণা এবং জ্ঞানচর্চার স্বাধীনতা রক্ষাই হার্ভার্ডের প্রধান নীতি, এবং সেটি রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।
তিনি আরও বলেন, “ক্ষমতায় যে রাজনৈতিক দলই থাকুক না কেন, কোনো সরকারকেই ঠিক করে দেওয়া উচিত নয় যে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কী পড়াবে, কাকে ভর্তি করবে, কাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেবে অথবা কোন বিষয়ে গবেষণা চালাবে।”
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, হার্ভার্ডসহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অত্যাধিকভাবে বামপন্থী মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে পড়েছে। প্রশাসন দাবি করে, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করছে এবং জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করছে। এছাড়া, গাজা যুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ ও ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগও সামনে এসেছে।
গত ১৮ মাসে চলমান গাজা যুদ্ধ এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে। হার্ভার্ডসহ বহু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই সরকার ও রক্ষণশীল মহলের চোখে বিদ্বেষমূলক ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে বিবেচিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নীতিমালা ও কার্যক্রমে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের মতে, এ ধরনের হস্তক্ষেপ শিক্ষার পরিবেশকে প্রভাবিত করে এবং স্বাধীন চিন্তাচর্চাকে বাধাগ্রস্ত করে। তাদের মতে, সরকারের নীতিমালা মানা মানেই বিশ্ববিদ্যালয়টির ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।
এই প্রেক্ষাপটে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের শিক্ষা ও গবেষণার স্বাধীনতার সঙ্গে কোনো আপস করবে না, এবং সরকারের এই তহবিল স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নেবে।
এটি শুধু হার্ভার্ড নয়, বরং সমগ্র উচ্চশিক্ষা খাতের স্বাধীনতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বহু শিক্ষাবিদ এবং সামাজিক নেতারাও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং শিক্ষার ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছেন।