বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে যেকোনো প্রজাতির মাছ আহরণের ওপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে এ নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ১১ জুন পর্যন্ত। সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার সময়কাল জুড়ে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের জলসীমায় সব ধরনের মৎস্য নৌযান কর্তৃক মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে। সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা, ২০২৩ এর বিধি ৩ এর উপবিধি (১) এর দফা (ক) অনুসারে, সরকার এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো সামুদ্রিক মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন বৃদ্ধি, সম্পদের সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যতের জন্য টেকসই মৎস্য আহরণ নিশ্চিত করা।
নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা ও তদারকির জন্য সমুদ্রে নিয়মিত টহল দেবে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী এবং মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স। তারা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখতে কঠোর নজরদারি চালাবে, যেন কোনো নৌযান মাছ ধরতে না পারে। এ ধরনের সমন্বিত উদ্যোগের ফলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন হয়।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানিয়েছেন, ভোলা জেলার সমুদ্রগামী জেলে রয়েছেন প্রায় ৬৫ হাজার। নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের জীবিকা যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য সরকার মানবিক সহায়তা হিসেবে প্রত্যেক জেলের জন্য ৭৮ কেজি করে চাল বরাদ্দ করেছে। এ চাল সরবরাহের মাধ্যমে জেলেরা এই সময়টা সহজে পার করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সামুদ্রিক মাছ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। তবে অতিরিক্ত আহরণ এবং অবৈজ্ঞানিকভাবে মাছ ধরা সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা সময়োপযোগী ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত পরিবেশবান্ধব ও টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। ভবিষ্যতের জন্য সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ করতে হলে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়মিতভাবে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা জরুরি। পাশাপাশি, জেলেদের জীবন-জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতাও সমানভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
সবশেষে, সরকার, সংশ্লিষ্ট বাহিনী এবং জেলেরা সম্মিলিতভাবে কাজ করলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং দেশের মৎস্য সম্পদ টেকসইভাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে এ নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।