জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করে যেসব জায়গায় একমত হওয়া যায়, তার ভিত্তিতে একটি জাতীয় সনদ প্রণয়ন সম্ভব। এই জাতীয় সনদ হবে রাষ্ট্র সংস্কারের পথে অগ্রসর হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমরা যে সংস্কার চায়, সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যমতের ভিত্তিতে পথ খুঁজে বের করতে হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) সঙ্গে এক সংলাপে এসব কথা বলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি জানান, প্রথম ধাপের এই সংলাপের মাধ্যমে মূলত আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত হলো। এটি একটি সূচনা মাত্র, যা পর্যায়ক্রমে আরো বিস্তৃত হবে। তিনি বলেন, “আমরা পর্যায়ক্রমে আলোচনা করব এবং বুঝতে চেষ্টা করব কোথায় কোথায় আমাদের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে এবং কোথায় ব্যাখ্যার প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। তখন আমরা কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট করব এবং দলগুলোর মতামতও বোঝার চেষ্টা করব।” আলোচনা ও বোঝাপড়ার এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই জাতীয় সনদের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত হওয়ায়, মে মাসের মধ্যভাগের মধ্যেই প্রাথমিক আলোচনা শেষ করতে চায় কমিশন। এরপর দ্বিতীয় ধাপে আরও ব্যাপক আলোচনা ও কার্যক্রম চালানো হবে।
আলোচনার প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, “টেবিলের দুই পাশে বসা হলেও আমরা একপক্ষই। আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন—রাষ্ট্র সংস্কার। পথ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে সে ভিন্নতাকে দূর করে ঐক্যের ভিত্তিতে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটানো সম্ভব।” তিনি ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ঐক্যের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে হবে এবং সংস্কারের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।
সংলাপটি সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। এতে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।
এনডিএমের পক্ষ থেকে দলটির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ নেতৃত্ব দেন। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আরও ৮ জন সদস্য। ববি হাজ্জাজ বলেন, “আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের অধিকাংশ বিষয়ে একমত। আমরা বড় আকারে রাষ্ট্রীয় সংস্কার দেখতে চাই, যা জনবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক সরকারব্যবস্থা গঠনে সহায়ক হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদী শাসন যাতে আর কখনো মাথাচাড়া দিতে না পারে, সেজন্য এই দল ও তাদের শাসনব্যবস্থাকে বাতিল করতে হবে। এটি হবে বৃহৎ সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
এই সংলাপের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক ঐক্য এবং সংস্কার প্রক্রিয়ার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো। এতে অংশগ্রহণকারী সব পক্ষই একটি গণতান্ত্রিক ও গ্রহণযোগ্য রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছে।