বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপনে ফিরে এসেছে বাঙালির প্রাচীন ঐতিহ্য। তবে এবার শুধুই অতীত নয় বরং তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির নতুন ছোঁয়া। রাজধানী ঢাকার নববর্ষ উদযাপন পেয়েছে এক অনন্য মাত্রা। মঙ্গল শোভাযাত্রার পরিবর্তে আয়োজন করা হয়েছে বর্ষবরণ ও আনন্দ শোভাযাত্রা। নতুন নামের এই শোভাযাত্রায় ছিল নতুন চিন্তার প্রতিফলন। শুধু শোভাযাত্রার ধরনেই নয় বদল এসেছে সাংস্কৃতিক আয়োজনেও।
নববর্ষের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন ছিল সর্ববৃহৎ ড্রোন শো যা অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। এই আয়োজন বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার এবং সহায়তা করেছে চীনা দূতাবাস। নতুন বছর নতুন বাংলাদেশ এই থিমকে সামনে রেখে আয়োজনটি হয়ে উঠেছে ইতিহাস ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক চেতনার এক অভিনব মিলনমেলা।
সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হয় ড্রোন শো যেখানে ১৯৭১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়কালকে তুলে ধরা হয় নানা প্রতিকৃতির মাধ্যমে। সেখানে দেখা গেছে চেতনার প্রতীক ২৪ এর বীর বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদ শহীদ মুগ্ধর পানির বোতল হাতে প্রতিকৃতি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সালাম জানানোর মুহূর্ত এবং পায়রার খাঁচা ভাঙার প্রতীকী উপস্থাপনা। এসবের পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি এবং বাংলাদেশ চীন বন্ধুত্বের শুভেচ্ছা বার্তা।
এ ড্রোন শো কেবল প্রযুক্তির প্রদর্শনী নয় বরং এটি ছিল এক ধরনের প্রতিবাদের ভাষা ইতিহাসের পাঠ এবং মানবিকতা ছুঁয়ে যাওয়ার মাধ্যম। উপস্থিত লক্ষাধিক মানুষ মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেছে এই ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন যা নববর্ষ উদযাপনকে নিয়ে গেছে এক নতুন উচ্চতায়।
ড্রোন শোর আগে বিকেল তিনটা থেকে শুরু হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বর্ণাঢ্য কনসার্ট। কনসার্ট ঘিরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। নানা বয়সের মানুষ বিশেষ করে তরুণ তরুণীরা গানের তালে নেচে গেয়ে উদযাপন করে বৈশাখের আনন্দ।
বিকেল গড়াতেই জনস্রোত পরিণত হয় এক বিশাল মিলনমেলায়। শহরের ব্যস্ত রাস্তা যেন হয়ে ওঠে কেবল আনন্দ উদযাপনের কেন্দ্র। মানুষ যেন ভুলে যায় সব ক্লান্তি সব দ্বিধা এবং মেতে ওঠে এক বিনোদনপূর্ণ মিলিত সংস্কৃতির মাঝে।
এবারের বাংলা নববর্ষ তাই হয়ে উঠেছে শুধু উৎসব নয় বরং এক ধরনের বার্তা। যেখানে ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে আধুনিকতা যেখানে সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গণসচেতনতা। নতুন বছর উদযাপন তাই এবার শুধু একটি দিনের অনুষ্ঠান নয় বরং তা হয়ে উঠেছে আগামী বাংলাদেশের একটি প্রতিচ্ছবি।