গাজাযুদ্ধ অবসানের আহ্বানে সরব ইসরাইলি গোয়েন্দা, সেনা ও চিকিৎসকরা
গাজায় হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তি ও যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইসরাইল সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন দেশটির সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা, সেনা সদস্য ও চিকিৎসকরা। তাদের বক্তব্য, যুদ্ধ থামিয়েই হলেও বন্দিদের ফিরিয়ে আনা দরকার।
এই আন্দোলনের সূচনা হয় ইসরাইলি বিমানবাহিনীর এক হাজার সাবেক সদস্যের একটি খোলা চিঠির মাধ্যমে। এরপর এতে যোগ দেন ২৫০ জনের বেশি সাবেক মোসাদ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা কর্মী, যাদের মধ্যে আছেন সংস্থার সাবেক প্রধান ড্যানি ইয়াতোম, এফ্রায়িম হালেভি ও তামির পারদো।
তারা তাদের চিঠিতে বলেন, চলমান যুদ্ধের ফলে বন্দি ও সেনা সদস্যদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারের উচিত সাহসী ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নিয়ে এই কষ্টের অবসান ঘটানো। তাদের মতে, বন্দিদের মুক্তি শুধু নিরাপত্তার নয়, এটি একটি নৈতিক বিষয়।
এই চিঠি পরিচালনা করেন সাবেক প্রধান বন্দি বিনিময় মধ্যস্থতাকারী ডেভিড মেইদান, যিনি ২০১১ সালে গিলাদ শালিত মুক্তি চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
এদিকে যুদ্ধবিরোধী এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন ২০০ সামরিক চিকিৎসক ও ১,০০০ শিক্ষাবিদ। তারা একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করে যুদ্ধ বন্ধ এবং বন্দিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। চিকিৎসকদের মতে, এই যুদ্ধ রাজনৈতিক স্বার্থে চালানো হচ্ছে, যার সঙ্গে নিরাপত্তার সম্পর্ক নেই।
চিকিৎসকরা আরও বলেন, গাজায় হামলার সময় প্রায় ৪০ জন বন্দি মারা গেছেন, যা আমাদের পেশাগত ও নৈতিক আদর্শের পরিপন্থী।
এই দাবিতে বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, প্যারাট্রুপার, সাঁজোয়া বাহিনীসহ বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরাও পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। গত কয়েকদিনে অন্তত ছয়টি যুদ্ধবিরোধী পিটিশন প্রকাশিত হয়েছে।
এই চাপের মধ্যে ৫ এপ্রিল জেরুজালেমে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যেসব সক্রিয় সেনা সদস্য এই পিটিশনে সই করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ১৮ মার্চ ইসরাইল পুনরায় গাজায় হামলা শুরু করে এবং ১৯ জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের চুক্তি ভঙ্গ করে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া এই যুদ্ধ এখন পর্যন্ত ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলাও চলমান।
সূত্র: টাইমস অব ইসরাইল ও আনাদোলু