দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার পর অবশেষে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসেছে তেহরান ও ওয়াশিংটন। শনিবার ওমানের রাজধানী মাস্কাটে এই আলোচনার সূচনা হয়। ওমানের মধ্যস্থতায় আয়োজিত এই আলোচনাকে দুই পক্ষই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে, যদিও সংশয় ও শঙ্কা এখনো স্পষ্ট।
ইরানি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। অপরদিকে, মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি নয়, বরং ‘পরোক্ষ আলোচনা’ চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি। তিনি জানান, ওমানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর বিন হামাদ আল-বুসাইদির মধ্যস্থতায় দুই দেশের প্রতিনিধিদের আলাদা কক্ষে রেখে আলোচনা পরিচালিত হচ্ছে।
তেহরান এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছে বেশ সতর্কতার সঙ্গে। অতীতে আমেরিকার সঙ্গে হওয়া চুক্তিগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে তারা জানে, ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান প্রায়ই পরিবর্তনশীল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, ইরান যদি তার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ না করে, তাহলে তারা সামরিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। এমনকি বারবার বোমা হামলার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে ইরান মনে করছে, আলোচনা আদৌ কোনো বাস্তব চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত।
তবে, উভয় পক্ষই সামান্য হলেও কিছু অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলমান শত্রুতা, পারস্পরিক অবিশ্বাস ও দুঃস্মৃতির কারণে ইরান ও আমেরিকা অনেক দূরে সরে গেছে। তারপরও ওমানের মতো নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের উদ্যোগে এই আলোচনার আয়োজনকে ইতিবাচক বলেই ধরা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই আলোচনা ব্যর্থ হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে আবারও উত্তেজনার শঙ্কা বাড়বে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল, যেখান থেকে বিশ্বের একটি বড় অংশের তেল রপ্তানি হয়, সেখানে নতুন করে সংঘাত শুরু হতে পারে। তাছাড়া, ইরানের প্রতিবেশী যেসব দেশে মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে, তাদেরও ইরান সতর্ক করে দিয়েছে। তেহরানের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, যদি এসব দেশ আমেরিকার সামরিক হামলায় যুক্ত হয়, তবে তাদের ‘কঠোর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে।
এই জটিল প্রেক্ষাপটে মাস্কাটের আলোচনা এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে উভয় দেশের সদিচ্ছা, বাস্তবতা বিবেচনায় কূটনৈতিক নমনীয়তা ও পারস্পরিক আস্থা পুনর্গঠনের ওপর। বিশ্ববাসী এখন তাকিয়ে রয়েছে—কঠোর হুমকি ও সংঘাতের বিপরীতে শান্তি ও সমঝোতার এক নতুন অধ্যায় রচিত হয় কি না।