‘রাষ্ট্র সংস্কার: রাজনীতিমুক্ত সামরিক বাহিনী’ শীর্ষক এক সেমিনারে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসনের আশঙ্কা থেকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। রাজধানীতে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের সংগঠন রাওয়ার আয়োজনে আয়োজিত এই সেমিনারে তিনি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, সংসদীয় শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র নয়, বরং ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে একটি ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে, যা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সহায়ক হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের আমল থেকেই সেনাবাহিনীর রাজনীতিকরণ শুরু হয় এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক স্বার্থে এই প্রক্রিয়া আরও গভীরতর হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে পেশাদারিত্ব ধ্বংস করা হয়েছে। সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থার কিছু কর্মকর্তা ব্যক্তিস্বার্থে ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন বলে তিনি অভিযোগ তোলেন। মাহমুদুর রহমান রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্রপুনর্গঠনের প্রস্তাব দেন, যেখানে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে।
সেমিনারে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ভারত স্বাধীনতার শুরু থেকেই বাংলাদেশ ও এর সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার চক্রান্তে লিপ্ত। তিনি সামরিক কর্মকর্তাদের ভারতে প্রশিক্ষণে না পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভারত এসব প্রশিক্ষণের আড়ালে সেনা কর্মকর্তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) ড. আবদুল্লাহ আল ইউসুফ বলেন, সেনাবাহিনীকে রাজনীতিমুক্ত রাখার জন্য বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানের অধীনে রাখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ ও বাজেট ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা দরকার।
সেমিনারে বক্তারা সামরিক বাহিনীকে পেশাদার ও রাজনীতিমুক্ত বাহিনীতে রূপান্তরের লক্ষ্যে একটি জাতীয় নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, সেনা অভ্যুত্থান বা জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি এখন নেই, তবে ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাব সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এই সেমিনারে অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান সামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা জাতির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সামরিক বাহিনী ও জনগণের মধ্যে ঐক্যের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।