দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অতিরিক্ত কর কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) শাহ মোহাম্মদ মারুফকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
আদেশে বলা হয়েছে, বগুড়া কর অঞ্চলের অতিরিক্ত কর কমিশনার শাহ মোহাম্মদ মারুফের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩(ঘ) ধারায় দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বিধায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিধিমালার ১২(১) অনুযায়ী তাকে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা জরুরি ও যুক্তিযুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা পাবেন।
শাহ মোহাম্মদ মারুফ ২০১০ সালে ২৮তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। চাকরিজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেও তার বিরুদ্ধে নানা সময়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ অভিযোগ অনুযায়ী, তার আয়কর নথিতে চার কোটির বেশি টাকার সম্পদের তথ্য রয়েছে, যা তার আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, মারুফ পরিবার নিয়ে রাজধানীর অভিজাত এলাকা বারিধারা কূটনৈতিক জোনে একটি ১২ কোটি টাকার দামি ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন। যদিও ফ্ল্যাটটি তার স্ত্রীর নামে ক্রয় করা হয়েছে, এখনো তা নিবন্ধন করা হয়নি। এছাড়া, নিজ ও স্ত্রীর ব্যবহারের জন্য রয়েছে আলাদা বিলাসবহুল গাড়ি। কর বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তার নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জমি, ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য বিনিয়োগ।
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এমন দুর্নীতিপূর্ণ কর্মকাণ্ড প্রশাসনের জন্য চরম উদ্বেগের বিষয়। এনবিআর সূত্র জানায়, এ ধরনের কর্মকাণ্ড কর প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ করে এবং জনসাধারণের আস্থায় চরম আঘাত হানে। এজন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে এনবিআর যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে।
এদিকে মারুফের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে বরখাস্তসহ আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে এনবিআর।
সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকে। আশা করা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।