বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চীন ব্যতীত অন্যান্য দেশগুলোর ওপর আরোপিত পারস্পরিক শুল্ক স্থগিতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বুধবার রাতে ড. ইউনূসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বার্তায় এ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। সেখানে বলা হয়, “আমাদের অনুরোধে ৯০ দিনের জন্য নতুন শুল্ক স্থগিত করার সিদ্ধান্তে সম্মতি জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, মি. প্রেসিডেন্ট। আমরা আপনার বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।”
এর আগে, গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্কারোপের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস এবং নিজেদের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন এই পদক্ষেপ নেয়। এই শুল্ক আরোপের আওতায় বাংলাদেশও পড়ে এবং দেশটির রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়, যা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য এক বিরাট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেন এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে শুল্কারোপের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করে তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়।
এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯০ দিনের জন্য শুল্ক আরোপ স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মহলে স্বস্তির বাতাস বইছে। তারা মনে করছেন, এই সময়ের মধ্যে কার্যকর কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি টেকসই সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।
ড. ইউনূসের এই ধন্যবাদ বার্তা শুধু কূটনৈতিক সৌজন্যই নয়, বরং এটি ভবিষ্যৎ বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে এবং দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের কূটনৈতিক প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশের পক্ষে নেওয়া এই দ্রুত পদক্ষেপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সদর্থক সাড়া নিঃসন্দেহে দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন সময় এসেছে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি, স্থিতিশীল ও লাভজনক বাণিজ্যিক কাঠামো গড়ে তোলার।