বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে তিনি শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীনের আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে চীনের প্রেসিডেন্টকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে ড. ইউনূস বৈঠকের সূচনা করেন এবং দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন।
ড. ইউনূস তার আলোচনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের পথ সুগম করেছে। এছাড়া চীনের সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে তিনি জানান, গ্রামীণ ব্যাংক ও সামাজিক ব্যবসার প্রচলনের সাথে তিনি চীনে যুক্ত ছিলেন, যা সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বৈঠকে ড. ইউনূস মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকটের কথা উল্লেখ করেন এবং চীনের শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে চীনের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।
চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক
বৈঠক শেষে ড. ইউনূস বেইজিংয়ের দ্য প্রেসিডেন্সিয়ালে চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি বিনিয়োগ সংলাপে অংশ নেন। সংলাপের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সম্পর্কে চীনা বিনিয়োগকারীদের অবহিত করা এবং বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করা।
প্রধান উপদেষ্টা একই ভেন্যুতে তিনটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল—টেকসই অবকাঠামো ও জ্বালানি বিনিয়োগ, বাংলাদেশের উৎপাদন ও বাজারের সুযোগ, এবং সামাজিক ব্যবসা, যুব উদ্যোক্তা ও থ্রি জিরো বিশ্বের ভবিষ্যত। ড. ইউনূস চীনের বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সামাজিক ব্যবসা ক্ষেত্রের অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ এবং চীনের স্বনামধন্য কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের নতুন দিগন্ত
ড. ইউনূসের এই সফর বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বিনিয়োগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে।
এছাড়া ড. ইউনূস চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের আয়োজনে এক নৈশভোজে অংশ নেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ঐতিহাসিক বন্ধনের কথা তুলে ধরেন এবং দুই দেশের সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর শান্তি, সমৃদ্ধি ও বিনিয়োগের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, বিনিয়োগ সংলাপ এবং ব্যবসায়িক নেতাদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও সামাজিক ব্যবসার ধারণা তুলে ধরেন। এ সফর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সহযোগিতার ভিত্তি মজবুত করবে বলে আশা করা যায়।