মিয়ানমারে পরপর দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। ভারতের ভূকম্প পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (NCS) জানিয়েছে, প্রথম ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭.৫ এবং দ্বিতীয়টির মাত্রা ৭.০ রিখটার স্কেলে। অন্যদিকে, আমেরিকার ভূতত্ত্ব পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইউএস জিয়োলজিক্যাল সার্ভে (USGS) প্রথম কম্পনের মাত্রা ৭.৭ এবং দ্বিতীয়টির মাত্রা ৬.৪ বলে জানিয়েছে। এই ভূমিকম্পের তীব্র কম্পন কলকাতা, দিল্লি-সহ ভারতের উত্তরাঞ্চল এবং থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ও সময়
ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, প্রথম ভূমিকম্পটি ভারতীয় সময় সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের বর্মা প্রদেশের ১২ কিলোমিটার উত্তরে উৎপন্ন হয়। দ্বিতীয় ভূমিকম্পটি হয় ১২টা ২ মিনিটে এবং এর উৎসস্থল ছিল মিয়ানমারের লকসকের ১৫১ কিলোমিটার পশ্চিমে। উভয় ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে। উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের এতটা কাছে যে কম্পনের তীব্রতা ছিল ভয়াবহ, ফলে মিয়ানমার ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়।
ব্যাপক আতঙ্ক ও ক্ষয়ক্ষতি
ভূমিকম্পের প্রভাবে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক-এ হোটেল, শপিংমলগুলো কাঁপতে শুরু করে এবং একটি নির্মাণাধীন ভবন ভেঙে পড়ে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। উত্তর থাইল্যান্ডে ট্রেন ও মেট্রো পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জরুরি বৈঠক ডেকেছেন পরিস্থিতি মোকাবিলায়।
মিয়ানমারের সাগাইং এলাকায় ইরাবতী নদীর ওপর পুরনো একটি সেতু ভেঙে পড়েছে, এবং সাগাইং থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে মান্দালয় শহরে ধ্বংসস্তূপের নিচে কয়েকজন আটকা পড়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এছাড়া মিয়ানমারের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির বিস্তারিত তথ্য এখনো নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়নি। দেশটিতে এখনো পর্যন্ত সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়নি।
ভূমিকম্পের প্রভাবিত এলাকা ও সতর্কতা
এই ভূমিকম্পের প্রভাব ৯০০ কিলোমিটার দূরে ব্যাংকক পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে, যা ভূমিকম্পটির তীব্রতার পরিচায়ক। স্থানীয় প্রশাসন ও জরুরি সেবাগুলো তৎপর রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ভবিষ্যৎ সতর্কতা ও করণীয়
ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় বসবাসরত মানুষদের ভূমিকম্পকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় মোকাবিলায় ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প-সহনশীল প্রযুক্তির ব্যবহার, সতর্কবার্তা দ্রুত প্রচার এবং উদ্ধার কার্যক্রম উন্নত করা প্রয়োজন।
মিয়ানমারে ভূমিকম্পের ফলে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির সঠিক পরিসংখ্যান জানতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। তবে প্রাথমিকভাবে পাওয়া খবর অনুযায়ী, এটি একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিল।