সরিষাবাড়ীতে জলাশয় দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় একটি সরকারি জলাশয় দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িয়েছে জেলা বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জুর অনুসারীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহাদান ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির এই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষে ‘তালতলা দহ’ নামে সরকারি জলাশয়টির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের বিরোধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
জানা গেছে, ১৪২৮ থেকে ১৪৩৩ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত জলাশয়টি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা দেওয়া হয়, যা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের নেতা খলিলুর রহমানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পরবর্তীতে আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জুর নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন লিটন ও সাবেক ইউপি সদস্য ইসাহাক আলী জলাশয়টির নিয়ন্ত্রণ নেন।
সম্প্রতি জেলা বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আওয়ালের পক্ষের ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব জলাশয়টি পুনর্দখলের চেষ্টা করেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আব্দুল ওয়াহাবের অনুসারীরা জলাশয়ে এসে পাঁচটি মাছ ধরার নৌকা ভাঙচুর করেন এবং দুটি জালে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া, আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জু ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল ওয়াদুদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়।
শুক্রবার সকালে সানাকৈর বাজারে বিএনপির দলীয় কার্যালয়সহ আব্দুল আওয়ালের বাড়ি ও কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে বিকেলে সানাকৈর বাজারে সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল আওয়াল অভিযোগ করেন, ‘রিফিউজি আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জু ও বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল ওয়াদুদ এলাকায় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। ছাত্রলীগের সহায়তায় তারা বিএনপির কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।’
অন্যদিকে, পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জু বলেন, ‘আব্দুল আওয়াল জনপ্রিয়তা হারিয়ে অনিয়ম ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছেন। জলাশয়ের দখল নিতে তিনি আমাদের আটটি বাড়ি, ছয়টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘আব্দুল ওয়াদুদ একজন মাদক চোরাকারবারি। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বেই বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে দলীয় প্রধানের ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে, জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন জানান, সংঘর্ষের কারণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।