উন্নত জীবনযাত্রার আশায় অনেকেই ইউরোপের পথে পা বাড়ান। সে পথেই অভিবাসী হয়েছিলেন উসমান দেম্বেলের বাবা-মা। মৌরিতানিয়া থেকে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের আশায় তাঁরা চলে যান ফ্রান্সে। সেখানেই দেশটির উত্তরাঞ্চলের শহর ভার্ননে জন্ম নেন দেম্বেলে। তাঁর শৈশব কেটেছে এই শহরেই। তবে মৌরিতানিয়া, মালি, সেনেগাল ও ফ্রান্সের সংস্কৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধনে বেড়ে উঠেছেন তিনি।
শৈশব থেকেই ঘরের বাইরে সময় কাটানো দেম্বেলের পছন্দের কাজ ছিল। ফুটবলের প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা। দিনরাত তাঁর চিন্তায় ছিল শুধু ফুটবল। খেলাধুলার প্রতি এমন প্রবল আগ্রহ দেখে বাবা-মাও তাঁকে বাধা দেননি। বরং তাঁর স্বপ্নপূরণে দিয়েছেন পূর্ণ সমর্থন। ছোটবেলায় একসময় তাঁর মা-ও তাঁকে নিয়ে চলে যান রেনেসে, যেখানে তিনি সাক্ষাৎ করেন তাঁর চাচা সাম্বাগুয়ের সঙ্গে। দেম্বেলের এই চাচাও ছিলেন একজন ফুটবলার, যিনি ছিলেন তাঁর রোল মডেল। এই চাচার হাত ধরেই দেম্বেলে ফুটবলে হাতে খড়ি নেন এবং জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
২০০৪ সালে ক্লাব ম্যাডেলিন এভারেক্সে দেম্বেলের ক্যারিয়ার শুরু হয়, যা সম্ভব হয়েছিল তাঁর চাচার সহায়তায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুটবলের প্রতি দেম্বেলের নিবেদন এবং কঠোর পরিশ্রম তাঁকে বিশ্ব ফুটবলে পরিচিত মুখ করে তোলে। ফ্রান্সের হয়ে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ জয়ের পর দেশকে উপহার দিয়েছেন বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি। কিন্তু তিনি কখনোই নিজের শেকড় ভুলে যাননি। মায়ের দেশ মৌরিতানিয়ার প্রতি ভালোবাসা থেকে বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রাইজমানি ও বোনাসের পুরো অর্থ তিনি দান করেন মায়ের গ্রামে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য।
ধর্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিগত জীবন
উসমান দেম্বেলে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। ইসলামের অনুশাসন, রীতি-নীতি ও আদর্শ তিনি গভীরভাবে অনুসরণ করেন। বার্সেলোনার হয়ে খেলার সময় থেকেই তিনি হালাল খাদ্য গ্রহণ করতেন এবং কখনো অ্যালকোহল বা শূকরের মাংস স্পর্শ করেননি। প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়েও (পিএসজি) একই নিয়ম অনুসরণ করে চলেছেন তিনি। তাঁর পরিবারের সদস্যরাও ইসলামী বিধান মেনে জীবনযাপন করেন।
২০২১ সালে ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী মরক্কোর নাগরিক রিমা এডবাউচেকে বিয়ে করেন দেম্বেলে। অন্যান্য তারকা ফুটবলারের মতো বিলাসবহুল বিয়ের আয়োজন না করে, ইসলামী রীতি অনুসারে অত্যন্ত সাদামাটা আয়োজনে বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।
রমজান মাস এলেই দেম্বেলে সাওম পালন করেন এবং রোজা রেখেই মাঠে অনুশীলন ও ম্যাচ খেলেন। তিনি বলেন, “আমি ধর্মে বিশ্বাসী। রোজা রেখেও যথেষ্ট সুস্থ ও ফিট থাকি। রোজা আমার পারফরম্যান্সে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না।” প্রতিদিন ভোরবেলায় উঠে তিনি নামাজ আদায় করেন, আর তাঁর দাড়ি ও পরনের জুব্বা বলে দেয় যে ইসলাম তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
নিভৃতে দানশীল এক ফুটবলার
উসমান দেম্বেলে একজন দানশীল ব্যক্তি। তিনি বহুবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, কিন্তু কখনোই তা প্রচার করতে পছন্দ করেন না। দানের খবর গোপন রাখা তাঁর নীতির অংশ। ফুটবলের বাইরে তিনি নিয়মিত ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটান এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে নিবেদিত রাখেন।
একদিকে ফুটবল মাঠে তাঁর দক্ষতা, অন্যদিকে ইসলামের প্রতি তাঁর একনিষ্ঠতা দেম্বেলেকে অনন্য এক ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। ইউরোপের বিলাসী জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে, তিনি একাধারে ধর্মপ্রাণ মুসলিম ও বিশ্বখ্যাত ফুটবলার হয়ে উঠেছেন।