গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থী শাসক জোটের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রবিরোধী পদক্ষেপের প্রতিবাদে হাজার হাজার ইসরাইলি রাস্তায় নেমেছে। তেল আবিব ও জেরুজালেমে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে বিক্ষোভকারীরা প্রধান মহাসড়কগুলো বন্ধ করে দেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং গাজায় হামাসের হাতে আটক ৫৯ জন জিম্মির দুর্দশাকে উপেক্ষা করছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে ২৪ জন এখনও জীবিত রয়েছেন। ব্রাদার্স ইন আর্মস আন্দোলনের প্রধান নির্বাহী এইটান হারজেল বলেন, “এই সরকার নিজেদের রক্ষার জন্য আবারও যুদ্ধ শুরু করেছে, জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরিয়ে দিতে চায়। তারা সম্পূর্ণভাবে বৈধতা হারিয়েছে এবং ব্যর্থ হয়েছে।”
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান চাপ
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে গাজায় প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালিয়ে দুই মাস ধরে চলা যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার তার সিদ্ধান্ত বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিক্ষোভকারীরা জোরালো কণ্ঠে স্লোগান দিচ্ছিলেন, “ইসরায়েল তুরস্ক নয়, ইসরায়েল ইরান নয়!” অনেকে ইসরায়েলি পতাকা হাতে এবং “এখনই জিম্মি চুক্তি” লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাজপথে নেমেছেন।
নৌবাহিনীর সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক ওরা নাকাশ পেলেদ বলেন, “আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পেরেছি। আমাদের সংগঠিত হতে হবে, অবিচল থাকতে হবে এবং মূল লক্ষ্যে মনোযোগী থাকতে হবে। বিক্ষোভ সহিংস হওয়া যেমন উচিত নয়, তেমনি এটিকে একেবারে ভদ্রোচিতও রাখা যাবে না।”
গণতন্ত্রের ওপর নেতানিয়াহুর আঘাত?
নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত ইসরাইলের গণতন্ত্রের জন্য ‘লাল পতাকা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বার ও অ্যাটর্নি জেনারেল গ্যালি বাহারাভ মিয়ারাকে বরখাস্ত করার প্রচেষ্টা। আইন বিশেষজ্ঞ ড. আমির ফুকস জানান, সরকার বারকে বরখাস্তের ক্ষমতা রাখে, তবে প্রশাসনিক আইন মেনে চলতে হবে, যা সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে।
নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে ‘কাতারগেট’ মামলায় দুর্নীতির তদন্ত চালাচ্ছে শিন বেত। ইতোমধ্যে ইসরাইলি পুলিশ নতুন সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
দুর্নীতি মামলায় নেতানিয়াহুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
৭৫ বছর বয়সী নেতানিয়াহু, যিনি ১৭ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, বর্তমানে দুর্নীতির একাধিক মামলায় আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। বিচার শেষে তার কারাদণ্ডের সম্ভাবনাও রয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার সময় ইসরাইলি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণে একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। তবে নেতানিয়াহু নিজে কোনো দায় স্বীকার করেননি এবং একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশনের আহ্বান প্রতিহত করেছেন।
ইসরাইলজুড়ে বিক্ষোভের ঢেউ আরও জোরালো হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর সরকার অভ্যন্তরীণ সংকটে পড়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে জনরোষের মুখে পড়তে পারে।