বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যাতে পলাতক ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের সুযোগ পায়।
শুক্রবার রাজধানীর লেডিস ক্লাবে পেশাজীবীদের সম্মানে আয়োজিত বিএনপির ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, একটি বিশেষ মহল সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে, যা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যারা সংস্কার শেষ করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে, তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন— “যেটি একবার শেষ হয়ে যায়, সেটি সংস্কার নয়। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।”
তারেক রহমান বলেন, বর্তমান সংবিধানকে ইচ্ছামতো পরিবর্তন করে স্বৈরশাসকরা এটিকে নিজেদের দলীয় সংবিধানে রূপান্তর করেছে। বিএনপির মতে, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে শুধু আইনি বা পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো গণতান্ত্রিক অধিকার ও রাজনৈতিক আচরণের বাস্তব প্রয়োগ। জনগণের গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমেই সংস্কার টেকসই ও কার্যকর হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গণইস্যুকে মুখ্য করতে গিয়ে জাতীয় ঐক্যের সংশয় তৈরি করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমি আবারও আহ্বান জানাই— এমন কোনো সিদ্ধান্ত যেন না নেওয়া হয়, যা রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে পলাতক স্বৈরশাসকদের সহযোগীদের পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করে।”
জাতীয় নির্বাচনের গুরুত্ব
তারেক রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করা হলে, ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি হবে। তাই প্রথমে জাতীয় নির্বাচন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যদি নাগরিকরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী না হন, তাহলে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না।”
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, “৫ আগস্ট মাফিয়া সরকারের পতনের পর দীর্ঘ দেড় দশকের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে, আমরা গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার এক অপার সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি।” এই প্রেক্ষাপটে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজকেও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পনায় পেশাজীবীদের মেধা ও দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। তবে বর্তমানে পেশাজীবীদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা রাখার সুযোগ সীমিত। তাই বিএনপি সংবিধানে “দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা” অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে বিশিষ্টজনদের মেধা ও অভিজ্ঞতাকে রাষ্ট্র ও সরকারের কাজে লাগানো যায়।
বিশিষ্ট নাগরিকদের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব
তারেক রহমান বলেন, বিশ্বের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের ওপরই বর্তায়। তবে নীতি ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে তারা কতটা সফল হবেন, তা অনেকাংশে নির্ভর করে বিশিষ্ট নাগরিক, সুশীল সমাজ ও পেশাজীবীদের ভূমিকার ওপর। তিনি বলেন, “রাষ্ট্র ও সমাজে বিশিষ্ট নাগরিকদের ভূমিকা যত কার্যকর হবে, রাজনৈতিক সরকারও তত বেশি দায়িত্বশীল ও শক্তিশালী হবে।”
ইফতার মাহফিলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ
বিএনপির আয়োজিত এ ইফতার মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।