বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংকগুলোর শেয়ারধারীদের নগদ ও স্টক (বোনাস) লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা জারি করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের মোট ঋণের ১০% বা তার বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে তারা কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না। একই সঙ্গে, নগদ জমা ও বিধিবদ্ধ জমায় ঘাটতির কারণে আরোপিত দণ্ডসুদ ও জরিমানা পরিশোধ না করা থাকলে লভ্যাংশ বিতরণ নিষিদ্ধ থাকবে।
নতুন নীতিমালার প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির ফলে ব্যাংকিং খাত চাপে পড়েছিল। সেই সংকট কাটিয়ে ওঠার পর ব্যাংকগুলোর মূলধন কাঠামো আরও সুসংহত ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা, ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
লভ্যাংশ বিতরণের শর্তাবলি
নতুন নীতিমালার আওতায় ব্যাংকগুলোকে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে:
1. শুধুমাত্র বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষের মুনাফা থেকে নগদ লভ্যাংশ দেওয়া যাবে – আগের পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে নগদ লভ্যাংশ দেওয়া যাবে না।
2. খেলাপি ঋণের হার ১০% এর বেশি হলে লভ্যাংশ দেওয়া যাবে না।
3. নগদ জমা ও বিধিবদ্ধ জমায় ঘাটতির কারণে আরোপিত দণ্ডসুদ বা জরিমানা অনাদায়ী থাকলে লভ্যাংশ দেওয়া যাবে না।
4. নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ঘাটতি থাকলে লভ্যাংশ দেওয়া যাবে না।
5. বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিলম্ব সুবিধা গ্রহণ করা হলে এবং তা বহাল থাকলে কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করা যাবে না।
লভ্যাংশের পরিমাণ ও সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দিষ্ট নিয়মের ভিত্তিতে লভ্যাংশ প্রদানের পরিমাণ নির্ধারণ করেছে।
লভ্যাংশের সর্বোচ্চ সীমা:
ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ কোনোভাবেই পরিশোধিত মূলধনের ৩০% এর বেশি হতে পারবে না।
“ডিভিডেন্ড পে-আউট রেশিও” নির্ধারিত হবে ব্যাংকের ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ ও কর-পরবর্তী মুনাফার অনুপাতে।
মূলধন সংরক্ষণের ভিত্তিতে লভ্যাংশ বিতরণ:
১৫% বা তার বেশি মূলধন সংরক্ষণ করতে পারলে – সর্বোচ্চ ৫০% ডিভিডেন্ড পে-আউট রেশিও অনুসারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ দেওয়া যাবে।
১২.৫% থেকে ১৫% এর মধ্যে মূলধন সংরক্ষণ করলে – সর্বোচ্চ ৪০% ডিভিডেন্ড পে-আউট রেশিও অনুসারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ দেওয়া যাবে।
১২.৫% এর কম তবে ন্যূনতম মূলধনের বেশি থাকলে – কেবল স্টক লভ্যাংশ দেওয়া যাবে।
কার্যকারিতা ও সময়সীমা
নতুন নীতিমালা ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ হিসাব বছরের লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ, ২০২৬ সালে বিতরণযোগ্য লভ্যাংশের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর থাকবে।
তবে যেসব ব্যাংক নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিলম্ব সুবিধা নিয়েছে, তারা ২০২৪ সালের জন্য কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালা ব্যাংকিং খাতকে আরও সুসংহত ও স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে। ব্যাংকগুলোকে এখন আরও সতর্কতার সঙ্গে তাদের মূলধন সংরক্ষণ ও লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।