ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, চীনের সহযোগিতা কোনো নির্দিষ্ট সরকারের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের জনগণের জন্য।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক কিংবা অভ্যন্তরীণ যে পরিবর্তনই আসুক, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট— চীন বাংলাদেশের অংশীদার হিসেবে থাকবে। আমাদের সহযোগিতা দেশের জনগণ এবং চীনা জনগণের জন্য।”
তিনি আরও বলেন, “চীন সবসময় একটি দেশ ও তার জনগণের পাশে থাকে, কেবল নির্দিষ্ট কোনো সরকারের পাশে নয়।”
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা, ঐক্য ও গণতন্ত্রের বিকাশ দেখতে চায় চীন বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
আগামী ২৬-২৯ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিশ্বের সব দেশের প্রধানমন্ত্রী ও সরকার প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে এ মুহূর্তে এই সফরের অগ্রাধিকারের বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “গণতন্ত্রের কোনো নির্দিষ্ট বৈশ্বিক মডেল নেই, এটি দেশভেদে ভিন্ন হতে পারে। জনগণই এটি নির্ধারণ করে।”
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অলটারনেটিভ আয়োজিত সেমিনারে ২০২৪ সালের একটি জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।
জরিপ অনুসারে, ৯৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী চীন-বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সমর্থন করেন। এছাড়া, ২০২৪ সালে প্রায় ৬৭ শতাংশ বাংলাদেশির চীন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা রয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় বেশি (৬০ শতাংশ)।
জরিপে আরও উঠে আসে, ৭৫ শতাংশ বাংলাদেশি উচ্চশিক্ষার জন্য চীনে যেতে বা তাদের সন্তানদের পাঠাতে আগ্রহী, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, “বাংলাদেশিরা চীনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানায় এবং জাতীয় উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে চীন-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার গুরুত্ব স্বীকার করে।”
তিনি আরও বলেন, “এই তথ্যগুলো চীনকে বাংলাদেশ-চীন কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব আরও এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আস্থাশীল করেছে।”
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে ১৪টি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে ২১৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
এছাড়া, গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রথম দফায় ১০ মার্চ কিছু রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য চীনে যান বলেও জানান তিনি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে তিনি বলেন, “এটি মূলত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সমস্যা। চীন মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করলেও রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সেই প্রচেষ্টা আপাতত থমকে গেছে।”