ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্প্রসারণের গতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে। এ মাসে পারচেজিং ম্যানেজার ইনডেক্স (PMI) সামান্য ধীর গতিতে বাড়লেও সূচকটি ৬৪.৬ পয়েন্টে স্থির হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। অর্থবছরের অষ্টম মাসে এসে কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা—সব প্রধান অর্থনৈতিক খাত সম্প্রসারণ সূচক প্রকাশ করেছে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (MCCI) এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (PEB) গতকাল রবিবার PMI-এর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই সূচকের মাধ্যমে ব্যবসা, বিনিয়োগকারী এবং নীতি নির্ধারকরা অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা পান।
কৃষি খাতের অগ্রগতি সবচেয়ে দৃঢ়
টানা পাঁচ মাসের ধারাবাহিক সম্প্রসারণ ধরে রেখেছে কৃষি খাত, যা অন্যান্য খাতের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম, ইনপুট খরচ এবং অর্ডার ব্যাকলগ সূচকের দ্রুত সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে।
উৎপাদন খাতের ছয় মাসের ধারাবাহিকতা
উৎপাদন খাত টানা ছয় মাস ধরে সম্প্রসারণ বজায় রেখেছে এবং এটি দ্রুত সম্প্রসারণের হার প্রকাশ করেছে। নতুন অর্ডার, কারখানার উৎপাদন, ইনপুট ক্রয় এবং সরবরাহকারী ডেলিভারি সূচক ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। তবে নতুন রপ্তানি, সমাপ্ত পণ্য, আমদানি এবং কর্মসংস্থান সূচকের ধীর সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে।
নির্মাণ খাতে ধীরগতি, তবে সম্প্রসারণ অব্যাহত
নির্মাণ খাত টানা তিন মাস ধরে সম্প্রসারণ বজায় রাখলেও এটি ধীর গতিতে এগিয়েছে। নতুন ব্যবসা এবং নির্মাণ কার্যক্রম সূচক ধীর সম্প্রসারণ রেকর্ড করেছে, যদিও ইনপুট খরচ সূচকের দ্রুত বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এ খাতে কর্মসংস্থান সূচক পুনরায় সম্প্রসারণে ফিরেছে, তবে অর্ডার ব্যাকলগ সূচক সংকোচন দেখিয়েছে।
সেবা খাতের অগ্রগতিতেও শ্লথ গতি
সেবা খাতও টানা পাঁচ মাসের সম্প্রসারণ বজায় রেখেছে, তবে এর অগ্রগতির গতি ধীর হয়েছে। নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং কর্মসংস্থান সূচক কিছুটা ধীর গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ খাতের অর্ডার ব্যাকলগ সূচক সংকোচনে ফিরেছে, তবে ইনপুট খরচ সূচকের দ্রুত সম্প্রসারণ লক্ষ্য করা গেছে।
ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
সব প্রধান অর্থনৈতিক খাত—কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ এবং সেবা—ভবিষ্যৎ ব্যবসা সূচকের ধীর সম্প্রসারণ রেকর্ড করেছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও সিইও মাশরুর রিয়াজ বলেন, “বাংলাদেশের PMI সূচক টানা পাঁচ মাসের স্থিতিশীল সম্প্রসারণ নির্দেশ করে, যা রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এবং কৃষিতে মৌসুমী প্রবৃদ্ধির কারণে সম্ভব হয়েছে। তবে নির্মাণ এবং সেবা খাতে ধীর সম্প্রসারণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দুর্বল চাহিদা, জ্বালানি বিভ্রাট এবং চলমান বিক্ষোভের কারণে ব্যবসায়িক আস্থা কমেছে। টেকসই পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং অগ্রাধিকারমূলক সংস্কারের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।”