দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক হামলা, বিক্ষোভ ও অবরোধের ঘটনা ঘটছে ‘তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে। মাজারে হামলা, সংবাদপত্র অফিসের সামনে গরু জবাই করে জিয়াফত, বইমেলায় স্টল বন্ধের দাবিতে হানা, এমনকি মামলার আসামিকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় মব গঠন— এসব কর্মকাণ্ড ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও উদ্বেগ।
ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি মুসলমানই তৌহিদী জনতা। তবে এই নাম ব্যবহার করে কেউ যদি আইনবহির্ভূত বা অনৈতিক কোনো কাজ করে, সেটি অপরাধ হিসেবেই গণ্য হবে। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একইভাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করেন, ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে যত্রতত্র হামলা বা আন্দোলন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য সরবরাহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াই হবে সঠিক পদক্ষেপ।
মাজারে হামলা ও ভাঙচুর
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ৪০টি মাজারে ৪৪ বার হামলার ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হয়েছে ঢাকা বিভাগের ১৭টি মাজার। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১০টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭টি মাজারে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর হয়েছে। এসব ঘটনায় ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানার ব্যবহার করা হয়েছে।
সংবাদপত্র অফিসের সামনে বিক্ষোভ
গেলো কিছুদিনে দেশের দুটি শীর্ষ গণমাধ্যমের অফিসের সামনেও বিক্ষোভ ও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কাওরান বাজারে প্রথম আলো পত্রিকা ভবনের সামনে গরু জবাই করে জিয়াফতের আয়োজন করা হয়। একইসঙ্গে ডেইলি স্টার পত্রিকার অফিসের সামনেও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
পুলিশের বক্তব্য
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, “তৌহিদী জনতা হোক বা অন্য কোনো ব্যানার, যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, অতীতেও এই ব্যানারের অন্তরালে অনেকে উগ্রপন্থি কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন এবং পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, নগরবাসীকে এ ধরনের তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি।
নেপথ্যে কারা?
এই কর্মকাণ্ডের পেছনে কারা রয়েছে, তা নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, কিছু সংগঠন ও গোষ্ঠী ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে, যাতে ধর্মের নামে কোনো উগ্রপন্থি গোষ্ঠী অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে।