অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রক্তদাতা জেমস হ্যারিসন, যিনি কয়েক দশক ধরে নিয়মিত রক্ত ও প্লাজমা দানের মাধ্যমে ২০ লাখেরও বেশি শিশুর জীবন রক্ষা করেছেন, ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন।
সোমবার (৩ মার্চ) বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, হ্যারিসন নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি নার্সিং হোমে ঘুমন্ত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
‘সোনালি হাতের মানুষ’ নামে পরিচিত হ্যারিসনের রক্তে একটি বিরল অ্যান্টিবডি ছিল, যা ‘অ্যান্টি-ডি’ নামে পরিচিত। এটি ‘লাইফব্লাড’ হিসেবেও পরিচিত, যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিশেষ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
অস্ট্রেলিয়ান রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিস হ্যারিসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জানায়, ১৪ বছর বয়সে গুরুতর অস্ত্রোপচারের সময় রক্ত গ্রহণের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি দাতা হওয়ার অঙ্গীকার করেন।
১৮ বছর বয়স থেকে তিনি নিয়মিত প্লাজমা দান শুরু করেন এবং ৮১ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর এই মহৎ কাজ চালিয়ে যান।
২০০৫ সালে সর্বাধিক রক্তের প্লাজমা দানের বিশ্ব রেকর্ড গড়েন হ্যারিসন, যদিও ২০২২ সালে এক মার্কিন নাগরিক সেই রেকর্ড ভেঙে ফেলেন।
তার মেয়ে ট্রেসি মেলোশিপ বলেন, “কোনো খরচ বা কষ্ট ছাড়াই এত মানুষের জীবন বাঁচানোর সুযোগ পেয়ে বাবা গর্বিত ছিলেন।”
অ্যান্টি-ডি টিকাগুলো অনাগত শিশুদের ভ্রূণ এবং নবজাতকের হিমোলাইটিক ডিজিজ (এইচডিএফএন) থেকে রক্ষা করে। এই মারাত্মক রক্ত ব্যাধি গর্ভাবস্থায় মায়ের ও শিশুর রক্তের অসামঞ্জস্যতার ফলে হয়, যা শিশুর রক্তকণিকার ওপর মায়ের ইমিউন সিস্টেমের আক্রমণের কারণ হতে পারে। এতে শিশুর রক্তাল্পতা, হৃদযন্ত্রের সমস্যা বা মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
হ্যারিসনের রক্ত কীভাবে ‘অ্যান্টি-ডি’ সমৃদ্ধ হলো, তা নিশ্চিত নয়। তবে ধারণা করা হয়, ১৪ বছর বয়সে রক্ত সঞ্চালনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে এটি সম্পর্কিত হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ায় ২০০ জনেরও কম ‘অ্যান্টি-ডি’ দাতা রয়েছেন, যারা প্রতি বছর প্রায় ৪৫ হাজার মা ও তাদের শিশুদের সহায়তা করেন। অস্ট্রেলিয়ান রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিসের তথ্যানুসারে, এটি ‘লাইফব্লাড’ নামেও পরিচিত।