বাংলা ভাষার ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ নাম মোঃ শামীম হাসনাত। মেহেদী হাসান খান যেমন অভ্র কীবোর্ড দিয়ে কম্পিউটারে বাংলা লেখার বিপ্লব এনেছিলেন, শামীম হাসনাত তেমনই মোবাইলের জন্য রিদ্মিক কীবোর্ড তৈরি করে অসংখ্য মানুষের বাংলা লেখাকে সহজ করে তুলেছেন। অথচ তার গল্প অনেকটাই আড়ালে থেকে গেছে।
শামীম হাসনাতের জন্ম ময়মনসিংহের চরনিলক্ষিয়া গ্রামের এক সাধারণ পরিবারে। ২০১০ সালে তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। তখন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের প্রচলন বাড়লেও, বাংলা লেখার সহজলভ্য কোনো সমাধান ছিল না। জনপ্রিয় অভ্র কীবোর্ড তখনও শুধুমাত্র কম্পিউটারে ব্যবহৃত হতো। শামীম স্বপ্ন দেখতে থাকলেন, কীভাবে মোবাইলেও বাংলা লেখাকে সহজ করা যায়।
সেই সময় গুগল প্লে স্টোরে বাংলা কীবোর্ড অ্যাপ ছিল হাতে গোনা কয়েকটি। মায়াবী কীবোর্ড জনপ্রিয় হলেও এতে বিজ্ঞাপনের আধিক্য ও জটিল ইন্টারফেস ব্যবহারকারীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। শামীম সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজেই একটি কীবোর্ড তৈরি করবেন। কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তার নিজের কোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোন ছিল না! বন্ধুর ফোন ধার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অবশেষে তিনি রিদ্মিক কীবোর্ড তৈরি করেন, যাতে অভ্রের ফোনেটিক লেআউট, প্রভাত এবং জাতীয় লেআউট অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
রিদ্মিক দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করলেও শামীমের পথচলা সহজ ছিল না। ২০১৫ সালে বিজয় কীবোর্ডের স্বত্বাধিকারী আনন্দ কম্পিউটারসের কপিরাইট অভিযোগের কারণে গুগল প্লে স্টোর থেকে রিদ্মিক সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে শামীম হার মানেননি। তিনি ইউনিজয় লেআউট সরিয়ে ফেলে নতুন সংস্করণ প্রকাশ করেন, যা দ্রুতই লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।
রিদ্মিক কীবোর্ড আজ ১০ কোটিরও বেশি ডাউনলোড অতিক্রম করেছে এবং এটি বাংলা টাইপিংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপ। এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি শামীমও নতুন প্রযুক্তির বিকাশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালে তিনি রিদ্মিক ল্যাবস প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার দল নিয়ে নিয়মিতভাবে নতুন অ্যাপ ও সেবা নিয়ে কাজ করছেন, যা বাংলা ভাষার ডিজিটাল ভবিষ্যৎকে আরও সমৃদ্ধ করছে।
আজ আমরা যখন মোবাইলে সহজে বাংলায় লিখি, তখন হয়তো ভুলেই যাই সেই নিভৃতচারী যোদ্ধার কথা, যিনি আমাদের জন্য এই পথ সহজ করে দিয়েছেন। তার নাম হয়তো সবার মনে নেই, কিন্তু তার সৃষ্টি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে।