নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে ঢাকার বাইরে একটি জেলা থেকে সরকারি নির্দেশে বাস অধিযাচনের (রিকুইজিশন) ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি এ ঘটনাকে ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের চেতনার পরিপন্থি। একইসঙ্গে, টিআইবি মনে করে, এ ঘটনায় সরকারের পাশাপাশি এনসিপিরও দায় রয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহারের দায় এড়াতে পারে না অন্তর্বর্তী সরকার
শনিবার (১ মার্চ) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “শিক্ষার্থী-জনতার অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের বিনিময়ে সূচিত ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর অভীষ্ট অর্জনের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের হাত ধরে নতুন রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব কর্তৃত্ববাদ পতন-পরবর্তী বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, তরুণ নেতৃত্বের হাতে গঠিত নতুন রাজনীতির প্রতি জনগণের প্রত্যাশা অপরিসীম। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণে দলটিকে একেবারে শুরুতেই বাস অধিযাচনের এই নজির ও তার নেতিবাচক প্রভাবকে ‘রেড অ্যালার্ট’ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ জাতীয় আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড ও আচরণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ও নতুন বন্দোবস্তে কর্তৃত্ববাদী চর্চা পরিহারের আহ্বান
টিআইবি মনে করে, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ও ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’-এর যে আদর্শ এনসিপি ধারণ করছে, তা পুরনো কর্তৃত্ববাদী চর্চার বিপরীত হওয়ার কথা। অথচ জন্মলগ্নেই সরকারি সুবিধা নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের নজির নতুন দলের প্রতি জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এ প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “শিক্ষার্থীদের গড়া এই নতুন রাজনৈতিক দল জিরো-সাম রাজনীতি নির্ভর ক্ষমতার অপব্যবহারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারে। কিন্তু নতুন নেতৃত্বের আচরণে যদি পুরনো কর্তৃত্ববাদী বা ক্ষমতার অপব্যবহারের চর্চা দেখা যায়, তবে তা জনগণের আস্থায় আঘাত হানবে। একইসঙ্গে এটি নতুন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।”
নতুন রাজনৈতিক দল কি ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে দূরে থাকতে পারবে?
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা ক্ষমতার অপব্যবহারের চর্চা থেকে এনসিপি কতটুকু দূরে থাকতে পারবে, তার ওপরই নির্ভর করবে দলটির গ্রহণযোগ্যতা।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক, জনপ্রতিনিধিত্ব ও সরকার পরিচালনায় একচ্ছত্র আধিপত্যের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী আচরণের সংস্কৃতির পরিবর্তনে নতুন রাজনৈতিক দল মূল অনুঘটকের ভূমিকা রাখবে, দেশবাসী এমনটাই আশা করে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারকেও নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা করবে না।”
টিআইবি মনে করে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অনৈতিক চর্চা পরিহার করা এবং জনগণের প্রত্যাশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। অন্যথায়, নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর ভবিষ্যৎও পুরনো শাসনব্যবস্থার মতোই হবে, যা জনগণের জন্য হতাশাজনক।