দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি নেই, বরং আগের বছরের তুলনায় আমদানি বেড়েছে। সরকারিভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রচুর পরিমাণে ভোজ্যতেল মজুত রয়েছে এবং পাইপলাইনে আরও কয়েক লাখ টন ঢোকার অপেক্ষায়। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন—বাজার থেকে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। ক্রেতারা একাধিক বাজার ঘুরেও এক লিটারের বোতল পাচ্ছেন না, এমনকি পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানগুলোর অবস্থাও একই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের কয়েকটি বৃহৎ কোম্পানি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ভোক্তাদের জিম্মি করছে। যথেষ্ট সরবরাহ থাকার পরও পরিকল্পিতভাবে বাজার থেকে তেল গায়েব করা হয়েছে, যেন দাম বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে এই চক্রের তথ্য থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বার্ষিক ভোজ্যতেলের চাহিদা ২৩-২৪ লাখ টন, যার মধ্যে রমজানের সময় প্রয়োজন হয় ৩ লাখ টন। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫৪৮ টন, পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টন। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও তেলের দাম নিম্নমুখী। এতকিছুর পরও খুচরা বাজারে তেলের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে আগের তুলনায় আরও বেশি পরিমাণ ভোজ্যতেল খালাস হয়েছে। তবুও সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে। রাজধানীর জিনজিরা, নয়াবাজার, কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল সহজলভ্য নয়। তবে খোলা তেল পাওয়া গেলেও তা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ডিলারদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল সরবরাহ করছে না। রমজানের চাহিদাকে পুঁজি করে তারা সংকট তৈরি করছে, যাতে সরকার দাম বাড়াতে বাধ্য হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। কিন্তু কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে যে, সরকার চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যেই সংকট সমাধান করতে পারত, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।