জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে দেশে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি চলছে। ফেব্রুয়ারি ১৫ তারিখের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দল ঘোষণার পরিকল্পনা করা হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সরকারের পদ ছাড়বেন বলে জানা গেছে। জুন মাসে আরও একজন উপদেষ্টা, মাহফুজ আলম, পদত্যাগ করতে পারেন।
দল গঠনের প্রস্তুতি ও সম্ভাব্য নেতৃত্ব
নতুন রাজনৈতিক দলটি প্রথমে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করবে। যদিও কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে কার নাম ঘোষণা করা হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়, তবে সদস্যসচিব হিসেবে নাহিদ ইসলাম দায়িত্ব নিতে পারেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নতুন দলটি দেশীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক নেতা বলেছেন, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের সরকার থেকে পদত্যাগ করে সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে নাহিদ ইসলাম যেহেতু এক দফা আন্দোলনের ঘোষক ছিলেন এবং ছাত্র-জনতার মধ্যে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে, তাই তিনি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকবেন বলে অনেকের প্রত্যাশা।
বিতর্ক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
নতুন দল গঠনের ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং নাহিদ ইসলামের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে, যেখানে অনেকে এটিকে আরেকটি ‘এক-এগারো’ পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের আন্ডারগ্রাউন্ড নেতাকর্মীরা নতুন দল সম্পর্কে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অভিযোগ করেছে যে, সরকারের সুবিধা গ্রহণ করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে, যা অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির অবস্থান
জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা মনে করেন, সরকারের কোনো উপদেষ্টা যদি নতুন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে চান, তবে তাদের অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেছেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অভ্যুত্থানের নেতারা সরকার থেকে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের নেতৃত্ব দেবেন—এটাই জনগণের প্রত্যাশা।”
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন জানিয়েছেন, “কে পদত্যাগ করবেন এবং কারা নতুন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে সরকারের সঙ্গে যুক্ত কেউ রাজনৈতিক দলে থাকতে পারবেন না—এই নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
সরকারের প্রতিক্রিয়া
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, “নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সরকার কোনো পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে না। কোনো উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলে যুক্ত হলে, তিনি সরকারের অংশ হিসেবে থাকতে পারবেন না।”
পরবর্তী পদক্ষেপ
আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর নতুন রাজনৈতিক দল আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। নাহিদ ইসলাম ছাড়াও নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের নাম সম্ভাব্য নেতৃত্বের তালিকায় রয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। আন্দোলন থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব কতটা প্রভাব ফেলতে পারে এবং তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতি কীভাবে গঠিত হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
সোর্স : আমারদেশ