ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটুর বিরুদ্ধে। তিনি সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন তহবিলের অর্থ ব্যাংকে জমা রেখে প্রাপ্ত সুদের প্রায় ১০ কোটি টাকা নিজের পকেটে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পরও তিনি সুদ হিসেবে আরও ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা তুলেছেন।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের (বিসিবিএল) অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে এসেছে, মেয়র টিটু ব্যাংকের সঙ্গে মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে ৬৯২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ৪ শতাংশ সুদে জমা রাখেন। তবে এই সুদের অর্থ সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা না করে বিভিন্ন অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে তুলে নেওয়া হয়। এসব টাকার বড় অংশ নগদায়নের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়।
প্রতারণার কৌশল
তদন্তে দেখা যায়, সুদ থেকে পাওয়া অর্থ একাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়, যা নগদায়ন করে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। সবচেয়ে বেশি অর্থ, প্রায় ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা, মেসার্স কর্ণফুলী এন্টারপ্রাইজের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। এ ছাড়া একাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তির মাধ্যমে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
বিসিবিএলের অডিট কমিটি বিষয়টিকে একটি সুস্পষ্ট আর্থিক প্রতারণা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, সরকারি তহবিল থেকে অর্জিত সুদের অর্থ যথাযথভাবে সিটি করপোরেশনের অ্যাকাউন্টে জমা না হওয়ায় আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে। তদুপরি, ব্যাংক থেকে সুদ নেওয়ার সময় কোনো কর কাটা হয়নি, ফলে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে।
ব্যাংক ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
বিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন স্বীকার করেছেন যে, তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, মেয়র সুদের অর্থ পে-অর্ডারের মাধ্যমে তুলেছেন এবং তা নগদায়ন করে অন্যত্র সরিয়েছেন।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. মোখতার আহমেদ জানিয়েছেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত হয়েছেন এবং খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, সিটি করপোরেশনের অর্থ যৌথ অ্যাকাউন্টে রাখা হয়, যেখানে একজনের এককভাবে টাকা তোলার সুযোগ নেই।
সাবেক মেয়রের অবস্থান
সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করে। অভিযোগ ওঠার পর থেকে সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু আত্মগোপনে রয়েছেন এবং তার ব্যক্তিগত ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
দুর্নীতির পরিণতি
অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এটি শুধু সিটি করপোরেশনের অর্থ নয়, জনগণের করের টাকা আত্মসাতের একটি জঘন্য উদাহরণ। এখন দেখার বিষয়, কর্তৃপক্ষ কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং দুর্নীতির এই চক্র ভাঙতে কতটা সফল হয়।
সোর্স : আমারদেশ