মোংলা বন্দরের উন্নয়ন: আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলাকে আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে এক বৈঠকে এ কথা জানান। বৈঠকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল।
মোংলা বন্দরের গুরুত্ব ও বিনিয়োগ আহ্বান
নৌপরিবহন উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, মোংলা বন্দর বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় সমুদ্রবন্দর। এটি দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, “বন্দরের ভৌগোলিক অবস্থান একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়কপথে এর দূরত্ব মাত্র ২১০ কিলোমিটার। নৌ, সড়ক ও রেলপথের অবকাঠামো সুবিধার কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজেই পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে।”
প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল এবং ভুটানের জন্যও মোংলা বন্দরের ব্যবহার অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ অবস্থায়, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এই বন্দরে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “মোংলা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে এটি আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।”
আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের বিনিয়োগের আগ্রহ
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের প্রতিনিধি দল নৌপরিবহন উপদেষ্টার প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়। তারা জানান, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে তাদের বিনিয়োগের আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরে বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি এবং বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের সম্পৃক্ত থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
বে-টার্মিনাল প্রকল্পের প্রভাব
চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে বন্দরের জট কমে যাবে এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের গতি বাড়বে। এর ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত হবে।
এছাড়া, আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর এবং নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালের আধুনিকায়ন ও উন্নয়নেও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
বৈঠকের উপস্থিতি ও প্রতিশ্রুতি
বৈঠকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আল হামুদি নেতৃত্ব দেন। তার সঙ্গে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
নৌপরিবহন উপদেষ্টা মনে করেন, এই বিনিয়োগের মাধ্যমে মোংলা বন্দর আন্তর্জাতিক মানের সুবিধা পাবে এবং দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। বন্দর ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের পাশাপাশি এর মাধ্যমে আঞ্চলিক বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
এডি পোর্টস গ্রুপের আগ্রহ এবং সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতির ফলে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।