সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগ পরিকল্পনা: বাংলাদেশে বন্দর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিশাল সম্ভাবনা
বাংলাদেশের বন্দর উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শীর্ষ দুটি কোম্পানি। মঙ্গলবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে এ প্রস্তাব করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বিনিয়োগ প্রস্তাবের প্রশংসা করে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আপনারা বিনিয়োগ করুন এবং যত খুশি শিল্প স্থাপন করুন।”
আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের উদ্যোগ
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ বাংলাদেশের বন্দর উন্নয়নে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে। এটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কনটেইনার এবং বহুমুখী টার্মিনাল উন্নয়নে কাজ করার পরিকল্পনা করছে। তাদের লক্ষ্য প্রস্তাবিত তিনটি বে-টার্মিনালের মধ্যে একটি উন্নয়ন করা। এর অধীনে টার্মিনালগুলোর অর্থায়ন, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের সিইও আল মুতাওয়া জানান, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের স্বাগতপূর্ণ মনোভাব তাদের জন্য বিনিয়োগের একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে। তিনি আরও বলেন, “এই বিনিয়োগ শুধু বন্দর ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করবে না, বরং বাংলাদেশের সামুদ্রিক বাণিজ্যের পরিধি বাড়াতে সহায়ক হবে।”
নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বিনিয়োগ
নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে কাজ করা সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরেকটি বড় কোম্পানি মাসদার, বাংলাদেশের উপকূলীয় পুনরুদ্ধারকৃত জমিতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা।
মাসদারের এই উদ্যোগ বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারকে বাড়িয়ে তুলবে এবং দেশের বিদ্যুৎ খাতের উপর চাপ কমাবে। এই বিনিয়োগ দেশের পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বন্দর উন্নয়নে আন্তর্জাতিক আগ্রহ
বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনা খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। ডিপি ওয়ার্ল্ড, এপি মোলার মারস্ক, এবং সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের মতো কোম্পানিগুলোর পর, আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ চতুর্থ প্রধান কোম্পানি যারা এক সপ্তাহের মধ্যে বন্দর উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এই বিনিয়োগ পরিকল্পনাগুলো শুধু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে না, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে দেশটিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বাংলাদেশ সরকারের স্বাগত মনোভাব এবং বিনিয়োগবান্ধব নীতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে। বিশেষ করে বন্দর এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে এই ধরনের উদ্যোগ দেশের অর্থনীতির গতিকে ত্বরান্বিত করবে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য অনুযায়ী, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ একটি উন্মুক্ত এবং আকর্ষণীয় বাজার। এমন বিনিয়োগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে শিল্প, অবকাঠামো, এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির বিকাশ ঘটবে।