দ্বিতীয় দিনের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত ‘এক দফা’ দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। রোববার শাহবাগ থেকে এক দফা দাবি ঘোষণা করার পর, গতকাল সোমবার শাহবাগে জড়ো হন তারা। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন, যেমন ‘মেধা না কোটা? মেধা মেধা’, ‘সংবিধানের মূল কথা, সুযোগের সমতা’, ‘৭১ এর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘সংগ্রাম না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’।
বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মূল গেটের সামনে দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন। এরপর তারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় পার হয়ে কারওয়ান বাজার হয়ে ফার্মগেটের দিকে মিছিল নিয়ে আসেন। ব্যারিকেড ভাঙার সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। পাশে পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ, বাংলামোটর, চাঁনখারপুল মোড়, ঢাকা মেডিকেল মোড় ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড় অবরোধ করেন, যা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিভিন্ন হল ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে মিছিল নিয়ে সংগঠিত হন। বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাহবাগে একটি অংশ এসে অবরোধ করে, বাকিরা বাংলামোটর, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড় এবং চাঁনখারপুল মোড় অবরোধ করেন।
ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন, যেমন ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘হাইকোর্ট না রাজপথ? রাজপথ, রাজপথ’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘আপস না সংগ্রাম? সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’।
বিকেল ৪টায় নিউমার্কেটের দিক থেকে একদল শিক্ষার্থী সায়েন্সল্যাব মোড়ে এসে রাস্তা অবরোধ করেন। কিছু সময় পরে টিএসসি থেকে শাহবাগ মোড়ে এসে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীদের আরেকটি মিছিল। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে কয়েকশত শিক্ষার্থী রাস্তার দুই পাশে গাড়ি জমে যায়।
শাহবাগ মোড়ে বিকাল ৪টার আগে থেকেই পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে সড়ক অবরোধ করেন এবং পরে রাস্তায় রাখা লোহার ব্যারিকেড ব্যবহার করে সড়ক আটকে দেন।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দ্বিতীয় দিনের মতো পালিত হয় কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি। বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবির পক্ষে স্লোগান, গান এবং কবিতা আবৃত্তি করে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়, চানখারপুল, ইন্টার কন্টিনেন্টাল মোড়, পল্টন মোড়, কারওয়ান বাজার, বাংলা মোটর এবং ফার্মগেটে ‘বাংলা ব্লকেড’ বাস্তবায়ন করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টসহ সচিবালয় এলাকা অবরোধ করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও মোড়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনের (বিইউপি) শিক্ষার্থীরা মিরপুর-১২, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী রেলপথ অবরোধ করেন।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মডার্ন মোড়, রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি হাজী মহসিন মুহাম্মদ কলেজ, সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ষোলশহর, চট্টগ্রাম রেলপথ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া-খুলনা সড়ক এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-পাবনা সড়কে ‘বাংলা ব্লকেড’ বাস্তবায়ন করেন।
রুয়েট, আনন্দমোহন, নোবিপ্রবি, আশেক মাহমুদ কলেজ, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন, যেমন ‘মেধা না কোটা? মেধা মেধা’, ‘সংবিধানের মূল কথা, সুযোগের সমতা’, ‘৭১ এর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘সংগ্রাম না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’।
রংপুরের মডার্ন মোড়ে শিক্ষার্থীরা ‘কোনঠে বাহে জাগো সবাই, কোটা প্রথা বাতিল চাই’ স্লোগানে কোটা সংস্কারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। এতে সারাদেশের সাথে রংপুর অঞ্চলের ছয় জেলার সড়ক যোগাযোগ দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর কলেজ, বেগম রোকেয়া কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘কোটায় মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে মেধাবীরা প্রবেশ করতে না পারায় দুর্নীতি-অনিয়ম বাড়ছে। অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য ১০ ভাগ কোটা রেখে বাকি কোটা পদ্ধতি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ব্লকেড কর্মসূচি চলবে।’
অধিকাংশ শিক্ষার্থী ঘোষণা দেন যে তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেবেন না। রংপুর মহানগর পুলিশের এডিসি (ক্রাইম) উৎপল রায় বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। তাদের কর্মসূচির নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আমরা মোতায়েন হয়েছি। তাদের এই কার্যক্রম যেন সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হয়, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পায়, কেউ যেন কোনো বেআইনি সুযোগ-সুবিধা না নিতে না পারে সে জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
‘এক দফা’ দাবি হলো সব গ্রেডে সকল ধরনের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাত