কমল রিডিং ক্লাব, ঢাকা কলেজের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো “আগামীর বাংলাদেশ ও তারুণ্যের ভাবনা” শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনা সভা। আজ ঢাকা কলেজের মুক্তমঞ্চে আয়োজিত এই আলোচনায় বিভিন্ন বর্ষের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বপ্ন, প্রত্যাশা এবং চিন্তাধারা প্রকাশ করেন। তারা আধুনিক রাষ্ট্র নির্মাণ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা প্রাণবন্ত বক্তব্যের মাধ্যমে তারুণ্যের শক্তি, সম্ভাবনা এবং দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উপস্থাপন করেন।
সোয়াইব আহমেদ সজীব বলেন, “আগামীর বাংলাদেশ হবে প্রযুক্তিনির্ভর, পরিবেশবান্ধব এবং মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন একটি রাষ্ট্র। এ লক্ষ্য অর্জনে তরুণদের সামনে থেকে নেতৃত্ব নিতে হবে।”
তিনি তরুণ সমাজের সৃজনশীল চিন্তা ও উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আজকের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের রাষ্ট্রের গতিপথ।
শাকিল আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হতে হবে মুক্ত চিন্তার চর্চাস্থল। শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা নয়, বরং মানবিকতা, নেতৃত্ব, এবং উদ্ভাবনী শক্তির উন্নয়ন ঘটাতে হবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়।”
তিনি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে এর আমূল সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা জোর দিয়ে বলেন।
মাহবুবুল আলম প্রিন্স বলেন, “যে জাতি তার শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে পারে, সেই জাতিই ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে পারে বিশ্বসভায়।”
তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দেন এবং তরুণদের মৌলিক চিন্তাধারার উন্নয়ন ঘটানোর আহ্বান জানান।
শেখ এমদাদুল ইসলাম শীশ তাঁর বক্তব্যে বলেন, “রাষ্ট্রের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় অবদান রাখতে পারে একজন সচেতন নাগরিক। আর সচেতন নাগরিক তৈরির প্রথম পাঠশালা হলো আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।”
তিনি শিক্ষার্থীদের শুধু ডিগ্রির জন্য নয়, নিজেদের মানবিক গুণাবলী ও দেশপ্রেমের উন্নয়নে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।
নাহিন খান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আগামী দিনের বাংলাদেশে চাই সমান সুযোগ, বৈষম্যহীন সমাজ এবং একটি টেকসই উন্নয়ন কাঠামো। তরুণরাই এ পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি।”
তিনি সকল তরুণকে প্রযুক্তি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং নৈতিক নেতৃত্ব বিকাশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও অত্যন্ত সচেতনতার সাথে তাদের মতামত তুলে ধরেন। তারা বলেন, আধুনিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষা, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং নাগরিক সচেতনতা। শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা, গবেষণা সুবিধা, স্বাধীন মত প্রকাশের পরিবেশ এবং জবাবদিহিতামূলক শাসন ব্যবস্থা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা তারুণ্যের শক্তিকে একটি অমিত সম্ভাবনা হিসেবে দেখেন। তারা মনে করেন, বর্তমান সময়ে তরুণদের মধ্যে যে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং দেশপ্রেম দেখা যাচ্ছে, তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ আগামী দিনে একটি মডেল রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারবে। এজন্য দরকার আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ এবং তরুণদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি।
সর্বশেষে আলোচকরা সবাই একমত হন যে, বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা যদি আত্মবিশ্বাস, দেশপ্রেম এবং সততার সাথে এগিয়ে আসে, তাহলে আগামীর বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ, মানবিক এবং গর্বিত এক জাতির প্রতিচ্ছবি।
কমল রিডিং ক্লাবের এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রাণবন্ত উৎসাহ এবং ভাবনাগুলোর গভীরতা প্রমাণ করে, আমাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কতটা সম্ভাবনাময়। ভবিষ্যৎ গড়ার এই অভিযাত্রায় তারুণ্যের এমন সক্রিয় অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে আশার আলো দেখায়।