ইউক্রেনকে বিভক্ত করে যুদ্ধ থামাতে চান ট্রাম্পের দূত
রাশিয়া ও ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ থামাতে একটি চমকপ্রদ প্রস্তাব দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত বিশেষ দূত জেনারেল (অব.) কিথ কেলগ। তাঁর মতে, ইউক্রেনকে ভাগ করে একটি শান্তি সমাধানের পথ তৈরি করা যেতে পারে—যেমনটা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বার্লিনে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেলগ বলেন, ইউক্রেনের পশ্চিম অংশে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে একটি বাহিনী মোতায়েন করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে একটি ‘রিঅ্যাসিউরেন্স ফোর্স’ গঠনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
তার মতে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী পূর্ব অংশে থাকলেও দুই অংশের মাঝে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল (ডিমিলিটারাইজড জোন) রাখা যেতে পারে, যেখানে ইউক্রেনীয় সেনাদের অবস্থান থাকবে। কেলগ আরও বলেন, দিনিপ্রো নদীর পশ্চিমে বিদেশি বাহিনীর অবস্থান মস্কোর কাছে উসকানিমূলক মনে হবে না।
তিনি বলেন, ইউক্রেনের মতো একটি বড় ভূখণ্ডে একাধিক বাহিনীর উপস্থিতি দিয়ে যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন সম্ভব। কেলগ বার্লিনের উদাহরণ টেনে বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সেখানে রুশ, মার্কিন, ফরাসি ও ব্রিটিশ অঞ্চলে ভাগ করে শাসন করা হয়েছিল—এখানেও তেমন কিছু হতে পারে।
তবে কেলগ স্পষ্ট করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে কোনো স্থল সেনা পাঠাবে না। বরং পূর্ব ইউক্রেনে, রাশিয়া যেখানে পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে, তার বরাবর ১৮ মাইল জুড়ে একটি ডিমিলিটারাইজড জোন তৈরির প্রস্তাব দেন তিনি।
মস্কোর পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে, তারা ইউক্রেনে কোনো ন্যাটো শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নেবে না। কেলগের প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউক্রেন সম্ভবত পূর্বাঞ্চলের কিছু এলাকা রাশিয়ার দখলে থাকা মেনে নিতে পারে। তবে কিয়েভ থেকে আরও পূর্বে কোনো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত।
এদিকে, কিয়েভের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য পরিকল্পনা পুতিন ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ট্রাম্পের প্রভাব কাজে লাগিয়ে একটি শান্তি চুক্তির লক্ষ্যে এগোনো হবে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে এবং ট্রাম্প সেটি ব্যবহার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার মনে করে, রাশিয়া আসলে সময়ক্ষেপণের জন্য এই আলোচনায় বসছে, শান্তির বিষয়ে তাদের আন্তরিকতা নেই।
এদিকে ট্রাম্পের অপর বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ সম্প্রতি সেন্ট পিটার্সবার্গে পুতিনের সঙ্গে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। ক্রেমলিন সেই বৈঠকের ছবি প্রকাশ করে জানায়, আলোচনার বিষয় ছিল ইউক্রেন সংকটের সমাধান।
আলোচনার আগেই ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পুতিনের উচিত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, কারণ এই যুদ্ধ ‘ভয়ংকর ও অর্থহীন’ এবং প্রতিটি সপ্তাহে হাজারো মানুষের প্রাণহানি ঘটছে।