ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর ধারাবাহিক বর্বর হামলার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বিকেলে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার চৌরাস্তা বাজারে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ।
এই কর্মসূচির আয়োজন করে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও সমাজসচেতন সংগঠন “নবজাগ্রত যুব সংঘ”।
বিক্ষোভ মিছিলটি চৌরাস্তা বাজার জামে মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে কাটাখালি বাজার ঘুরে আবার চৌরাস্তা বাজারে এসে শেষ হয়। সমাপ্তির আগে বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনে শহীদ মুসলিমদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
এ সময় তৌহিদী জনতার ঢল নামে পুরো বাজার জুড়ে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ পর্যন্ত সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেদের ঈমানি দায়িত্ব মনে করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন।
“ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ!”— গগনবিদারী স্লোগানে মুখরিত চৌরাস্তা বাজার
বিক্ষোভকারীদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গর্জে ওঠে একের পর এক স্লোগান—
“ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ!”, “ইসরায়েলের জুলুম বন্ধ কর!”, “গাজা রক্তে ভাসছে, বিশ্ব বিবেক কোথায়?”, “তৌহিদী জনতা জাগছে, ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াচ্ছে!”
এসব স্লোগানে মুহুর্মুহু মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
অনেকেই ফিলিস্তিনের পতাকা, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদে অংশ নেন। শিশুদের হাতেও দেখা যায় “Stop Killing Innocents” ও “We Stand with Palestine” লেখা বোর্ড।
সমবেদনার পাশাপাশি জেগে ওঠে সচেতনতা ও সংহতির আহ্বান
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, “আমরা শুধু মুসলমান হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে আজকের এই বর্বরতার প্রতিবাদ করছি। ফিলিস্তিনে যা হচ্ছে তা মানবতার বিরুদ্ধে এক নির্মম অপরাধ।”
নবজাগ্রত যুব সংঘের একজন সংগঠক বলেন, “আমরা চাই এই বার্তা শুধু চৌরাস্তা বাজারেই নয়, ছড়িয়ে পড়ুক সারাদেশে এবং বিশ্ব বিবেক যেন জেগে ওঠে।”
তিনি আরও জানান, এই কর্মসূচি কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত ও মানবিক চেতনা থেকে উৎসারিত।
বিশ্বের বিবেককে জাগ্রত করার আহ্বান
এই বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে নবজাগ্রত যুব সংঘ শুধু প্রতিবাদ জানায়নি, বরং তারা একটি জোরালো বার্তা দিয়েছে— জুলুম যত বড়ই হোক, মুসলমানরা নিরব থাকবে না।
বিক্ষোভ শেষে দোয়া মাহফিলে ফিলিস্তিনের শহীদদের জন্য মাগফিরাত, আহতদের দ্রুত আরোগ্য এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিজয়ের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
স্থানীয় জনতার আন্তরিক অংশগ্রহণ
এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে স্থানীয় ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক, দিনমজুর, কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
তাদের চোখেমুখে ছিল ক্ষোভ, কণ্ঠে ছিল প্রতিবাদের দৃপ্ত আওয়াজ। অনেকেই চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, “আমরা দূরে থেকে কিছু করতে না পারলেও অন্তত প্রতিবাদের আওয়াজ তো তুলতে পারি।”
এ ধরনের প্রতিবাদে অংশ নেওয়া এক কলেজছাত্রী বলেন, “ফিলিস্তিনের নিরীহ শিশুদের মুখ যখন দেখি, নিজের ভাই-বোনদের কথা মনে পড়ে যায়। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ থাকা মানেই তা মেনে নেওয়া, আর আমরা তা হতে দেব না।”
সমাপ্তি কিন্তু নয়—শুরুর বার্তা
নবজাগ্রত যুব সংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবিষ্যতে এমন আরও সচেতনতা ও সংহতি মূলক কর্মসূচি পালন করা হবে।
তারা দেশের অন্যান্য এলাকাতেও এ ধরনের প্রতিবাদ ও সচেতনতা বার্তা পৌঁছে দিতে চায়।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর নির্বিচার হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি স্থানীয়ভাবে যেমন তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি বিশ্বজনীন মানবতা ও ন্যায়ের পক্ষে একটি সাহসী অবস্থান হিসেবেও নজির হয়ে থাকবে।