ভারতের আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ টানা ১৭ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে জাতীয় গ্রিডে পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়, যা সাময়িক সমস্যার পর স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে আদানির দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তবে দ্রুত সমস্যা চিহ্নিত করে একটি ইউনিট পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়েছে। অন্য ইউনিটটি চালু করতে দুই থেকে তিনদিন সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে গ্রাহকদের ভোগান্তি কমানো যায়। তিনি আশ্বাস দেন, এই সমস্যার কারণে দেশে বড় ধরনের কোনো বিদ্যুৎ সংকট হবে না।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) জানায়, গত ৮ এপ্রিল সকাল ৮টায় ভারতের আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে মোট ১৩৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। কিন্তু কিছু সময় পরেই কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে, সরবরাহ কমে ৮৯৪ মেগাওয়াটে নেমে আসে। সকাল ১০টার দিকে একটি ইউনিট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং তখন শুধুমাত্র অপর ইউনিট থেকে ৭৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ চলছিল।
পরবর্তী সময়ে শনিবার দ্বিতীয় ইউনিটটিও সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে কোনো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় দেশীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে নির্ভরতা বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ভারতের আদানি গ্রুপ বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তির আওতায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে। ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোধদা জেলায় অবস্থিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র। তবে কারিগরি ত্রুটির মতো সমস্যাগুলো এই নির্ভরতাকে মাঝে মাঝে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
এই ঘটনার পর বিদ্যুৎ খাতে প্রযুক্তিগত রক্ষণাবেক্ষণ ও বিকল্প উৎসের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর নতুন করে গুরুত্বারোপ করার দাবি উঠছে। যদিও পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে, তবে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।