এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে এবারের ঈদযাত্রা সম্পন্ন হয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির চাপ থাকলেও কোথাও দীর্ঘস্থায়ী যানজট দেখা যায়নি। গাড়িগুলো ধীরগতিতে চললেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকার ভোগান্তি ছিল না। কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা যায়নি, অধিকাংশ ট্রেন নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে গেছে। একইভাবে সদরঘাট নদীবন্দরে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা গেলেও যাত্রী পূর্ণ হলেই লঞ্চ ছেড়ে গেছে।
এবারের ঈদযাত্রায় এমন পরিস্থিতি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। আগের বছরের তুলনায় এবার যাত্রা ছিল স্বস্তিদায়ক। তবে কিছু বাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘ ছুটির কারণে যাত্রীদের চাপ ধাপে ধাপে পড়েছে, ফলে সড়কে অতিরিক্ত যানজট হয়নি। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় তৎপরতার কারণে বড় ধরনের ভোগান্তি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। যদিও কিছু বাস অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে, বেশিরভাগই নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করেছে।
ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট পরিদর্শন করেছেন নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি লঞ্চের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর নেন এবং নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। একইভাবে, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক প্রকৌশলী আফজাল হোসেন জানান, কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার প্রয়োজন হয়নি, নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ায় যাত্রীরা স্বস্তিতে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে পেরেছেন।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন মহাখালী বাসস্ট্যান্ড পরিদর্শন শেষে জানান, যানবাহনের বিশৃঙ্খলা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে। যদিও টোল প্লাজাগুলোতে গাড়ির দীর্ঘ সারি ছিল, তবুও বড় ধরনের যানজট দেখা যায়নি।
রাজধানীর গাবতলী ও গুলিস্তান বাস টার্মিনালে যাত্রীচাপ তুলনামূলক কম ছিল। অনেক বাস যাত্রীদের ডেকে নিচ্ছিল। তবে কিছু বাস অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে, যেমন গুলিস্তানে ‘ইলিশ’ বাস বরিশালগামী যাত্রীদের কাছ থেকে ৯০০ টাকা আদায় করেছে, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটগামী ‘সেলফি’ বাসের ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় কয়েকটি পরিবহনকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এবারের ঈদযাত্রায় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ছিল না, যা যাত্রীদের জন্য স্বস্তির বিষয়। তবে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে বিনা টিকিটের যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ ছিল, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। স্টেশন ম্যানেজমেন্টের মতে, প্রতিদিন ৭১টি ট্রেন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলাচল করছে এবং টিকিটবিহীন যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নৌপথেও এবার ঈদযাত্রা ছিল স্বস্তিদায়ক। সদরঘাটে যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেলেও লঞ্চ মালিকরা অতিরিক্ত লঞ্চের ব্যবস্থা রেখেছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় ছিল। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন জানান, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী লঞ্চ ছাড়ছে এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
এবারের ঈদযাত্রায় সাধারণ মানুষের জন্য দুর্ভোগ কম হওয়ায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যাত্রীদের অভিমত, আগের বছরের তুলনায় এবারের যাত্রা ছিল অনেকটাই নির্বিঘ্ন ও স্বস্তিদায়ক।
ঈদুল ফিতর, ঈদ যাত্রা, যানজট।