মুসলিম বিশ্বের বিভক্তির কারণেই ইসরাইল গাজায় নির্বিচারে গণহত্যা চালানোর সুযোগ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, “যদি সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক, মিসর, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো ছয়টি শক্তিশালী মুসলিম দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে হুঁশিয়ার করত, তাহলে ইসরাইল একদিনও ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালাতে পারত না। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ৬১ হাজারের বেশি মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু।”
ওআইসি ও আরব লিগ অকেজো সংগঠন
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের হলরুমে ওয়ার্ল্ড মুসলিম উম্মাহ আয়োজিত ‘Unity and Solidarity of Muslim Ummah’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “ওআইসি এবং আরব লিগসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন একেবারেই নিষ্ক্রিয়। তারা শুধু বিবৃতির মধ্যেই নিজেদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছে। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। মুসলিম বিশ্বের ঐক্য নিশ্চিত করতে হলে নতুন একটি কার্যকর ইসলামিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।”
মুসলমানদের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা
মুসলিম উম্মাহর বিভক্তিকে দুঃখজনক উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, “সারা বিশ্বে ২০০ কোটির বেশি মুসলমান থাকলেও তাদের মধ্যে ঐক্যের অভাব। ফলে বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে। এর জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী।”
তিনি আরও বলেন, “ইসলামে বিভেদের কোনো স্থান নেই। মুসলমানদের মধ্যে সংহতি থাকলে বিশ্বের কোথাও মুসলমানরা নির্যাতনের শিকার হতো না। ঈমানের দাবি হলো— বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে মুসলমানরা নির্যাতিত হলে তাদের পাশে দাঁড়ানো। মুসলিম উম্মাহর প্রতি ভালোবাসা না থাকলে ঈমান পূর্ণতা পায় না।”
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও ভারতের ষড়যন্ত্র
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, “ভয়ংকর ইসলামবিদ্বেষী প্রতিবেশী দেশ ভারত এখনো নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা আবারও তাদের ক্রীড়নকদের ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনা তাদের একমাত্র দালাল নন, তার মতো আরও অনেকে রয়েছে, যাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য তারা সক্রিয় রয়েছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
জুলাই বিপ্লব ও ইসলামের বিজয়
মাহমুদুর রহমান বলেন, “তরুণদের আত্মত্যাগের ফলে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে জালিমের বিরুদ্ধে ইসলামের বিজয় সম্ভব হয়েছে। বিপ্লব-পরবর্তী সরকারের অনেক সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের মতানৈক্য থাকতে পারে, শরিয়াহর ব্যাখ্যায় পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু জাতীয় ইস্যুতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি।”
তিনি আলেম সমাজকে সতর্ক করে বলেন, “তাদের বক্তব্য এমন হতে হবে, যা শত্রুদের অপপ্রচারের সুযোগ না দেয়। কারণ বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সবসময়ই ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করে।”
সভায় উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক। সভায় আরও বক্তব্য দেন ওয়ার্ল্ড মুসলিম উম্মাহর সেক্রেটারি জেনারেল ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ খান, লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী, ড. ফজলুর রহমান, নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন, মুফতি সৈয়দ আব্দুস সালাম, ড. নাজিম আহমদ, ড. ইমরান হোসেন ও নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি গঠনের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, “বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব।”