গত সপ্তাহে ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে ধারাবাহিক সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে চীন। তাইওয়ান প্রণালি থেকে তাসমান সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এই মহড়ায় চীন তার অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থার সক্ষমতা প্রদর্শন করে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের মহড়ার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকা ও আঞ্চলিক দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা।
তাইওয়ান প্রণালিতে উত্তেজনা
গত বুধবার চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) তাইওয়ানের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল থেকে মাত্র ৭৫ কিলোমিটার দূরে সামরিক মহড়া চালায়। এতে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, বিনা নোটিসে এই মহড়া দেশটির বাণিজ্যিক বিমান ও জাহাজ চলাচলের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। তারা আরও জানায়, চীনের ৪৫টি সামরিক বিমান ও ১৪টি নৌযান এ সময় তাইওয়ানের জলসীমার আশপাশে অবস্থান নেয়।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, চীনের এ ধরনের আচরণ আন্তর্জাতিক নীতিমালার লঙ্ঘন। তবে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এটিকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ মহড়া হিসেবে উল্লেখ করে তাইওয়ানের প্রতিক্রিয়াকে অতিরঞ্জিত বলে মন্তব্য করেছে।
তাসমান সাগরে চীনের মহড়া ও অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের উদ্বেগ
চীনের নৌবাহিনী অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের উপকূলের কাছাকাছি তাসমান সাগরেও সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এতে তিনটি চীনা নৌযান সরাসরি গুলি ছোড়ে, যা ক্যানবেরা ও ওয়েলিংটনের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। নিউজিল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জুডিথ কলিন্স জানান, চীনা জাহাজগুলো জাহাজবিধ্বংসী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ অত্যন্ত শক্তিশালী অস্ত্র বহন করছিল, যা দিয়ে সহজেই অস্ট্রেলিয়ায় আঘাত হানা সম্ভব।
এদিকে নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইন্সটন পিটার্স চীনের এই পদক্ষেপকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যর্থতা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ঈ’র সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে ভবিষ্যতে চীন এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকবে।
তবে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ক্যানবেরা ও ওয়েলিংটন চীনের সামরিক কার্যক্রম নিয়ে অযথা উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করছে, যা বেইজিংয়ের জন্য হতাশাজনক।
চীনের আগ্রাসন ও আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনের এই সামরিক মহড়া ইঙ্গিত দেয় যে, তারা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শক্তি প্রদর্শনের কৌশল নিয়েছে। টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিস্টিয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিফেন ন্যাগি বলেন, আমেরিকার অন্যান্য বৈশ্বিক ইস্যুতে মনোযোগ থাকার কারণে চীন এই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে এবং তার সামরিক উপস্থিতি সুসংহত করছে।
সিঙ্গাপুরের এস রাজারাতনাম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ফেলো ড্রু থমসনের মতে, চীনের সামরিক আগ্রাসন মোকাবিলা করতে আঞ্চলিক দেশগুলোর প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় আরও বিনিয়োগ করা উচিত। একই সঙ্গে, চীনের কর্মকাণ্ড নথিভুক্ত করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচার করা প্রয়োজন।
বিশ্লেষকদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটসহ অন্যান্য বৈশ্বিক ইস্যুতে মনোযোগী থাকায় চীন ভবিষ্যতেও এ ধরনের স্বল্পমেয়াদি মহড়া চালিয়ে যেতে পারে, যা পূর্বঘোষিত হবে না।