শিরোনাম:
শিরোনাম:
প্রবাসীদের রেমিটেন্সেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়েছে নোয়াখালী, সীমাহীন দুর্ভোগ ট্রাম্প প্রশাসন থেকে ইলন মাস্কের পদত্যাগ বিসিবি সভাপতির পদ থেকে ফারুক আহমেদের বিদায় বিসিবি সভাপতির পদ থেকে ফারুক আহমেদের বিদায়, স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন আমিনুল ইসলাম সারাদেশকে হাসপাতাল বানালেও লাভ নেই যদি সেবার মান নিশ্চিত না হয় এনসিপি নেতা সারজিসের ইন্ধনে রংপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলা শেরপুরে ভিজিএফের ১১৫ বস্তা চাল জব্দ গভীর নিম্নচাপ উপকূল অতিক্রম করছে, ৪ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা ১০০০, ৫০ ও ২০ টাকার নতুন নোট বাজারে আসছে ১ জুন

চট্টগ্রাম ওয়াসায় গোপন চুক্তি ২৩০০ কোটি টাকার

অনলাইন ডেস্ক
সময় : মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫

চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন (প্রথম পর্যায়)’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩,৮০০ কোটি টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যয় বাড়িয়ে ৫,২১৯ কোটি টাকা করা হয়, যা আগের তুলনায় ১১১ শতাংশ বেশি।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই ২,২৮৪ কোটি টাকার কাজ একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি নজরে এনেছে পরিকল্পনা কমিশন, যদিও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা তা অস্বীকার করছেন।

নিয়ম ভঙ্গ ও অনুমোদনহীন ব্যয় বৃদ্ধি

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) অনুমোদনের আগে প্রকল্পের অবকাঠামোগত ডিজাইন পরিবর্তন, নতুন টেন্ডার আহ্বান এবং স্কোপ পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসা এই নিয়ম না মেনেই ব্যয় বাড়িয়ে কার্যাদেশ দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রকল্পের অনুমোদিত ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) অনুযায়ী তিনটি কাজের প্যাকেজ ছিল—

  1. প্যাকেজ ডব্লিউ-১: ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১৭.৭৮ কোটি টাকা
  2. প্যাকেজ ডব্লিউ-২: ব্যয় ধরা হয়েছিল ১,৪৪৪ কোটি টাকা
  3. প্যাকেজ ডব্লিউ-৩: ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৯১.৬৫ কোটি টাকা

এই তিনটি প্যাকেজের মোট অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২,০৫৩.৭৩ কোটি টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে নতুন ডিজাইন ও দামের ভিত্তিতে ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়, যেখানে এই তিন প্যাকেজের সর্বমোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪,৩৩৭.৬১ কোটি টাকা। ফলে ব্যয় বেড়ে গেছে ২,২৮৪ কোটি টাকা, যা অনুমোদিত মূল ব্যয়ের তুলনায় ১১১ শতাংশ বেশি।

পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি ও মন্ত্রণালয়ের নীরবতা

পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্যাকেজ ডব্লিউ-১ এবং ২০২২ সালের ২২ জুন বাকি দুটি প্যাকেজ অনুমোদন করানো হয়, যা নিয়মবহির্ভূত। প্রকল্প সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন না নিয়েই ডিজাইন পরিবর্তন ও ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হলেও মন্ত্রণালয় কোনো জবাব দেয়নি।

২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেক সভায় এই প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের কথা থাকলেও পরবর্তীতে এর মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয় এবং ব্যয় বাড়িয়ে ৫,২১৯ কোটি টাকা করা হয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের পাল্টা দাবি

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক কামরুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নতুন সরকার আসার পর কিছু প্রকল্প একনেক অনুবিভাগে পাঠানো হলেও সেগুলো আবার রিভিউ করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ওয়াসা সব নিয়ম মেনেই কাজ করছে এবং পরিকল্পনা কমিশনের বক্তব্য পুরোপুরি সত্য নয়।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের সময় ডলারের বিনিময় হার কম ধরা হয়েছিল (৯৫ টাকা), কিন্তু পরবর্তীতে তা বেড়ে ১১০ টাকা হয়ে যাওয়ায় ব্যয় সংশোধন করতে হয়েছে। তিনি দাবি করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পারসেজ কমিটিতে পরিকল্পনা কমিশনের একজন সদস্য থাকেন এবং সেখানেই বিষয়গুলো যাচাই করা হয়।

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রকল্প সংশোধন

বিগত সরকারের সময় পরিকল্পনা কমিশন দুর্বল হয়ে পড়েছিল বলে জানা গেছে। সে সময় কিছু প্রভাবশালী মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হতো, যেখানে কমিশনের সদস্যরা যথাযথ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারতেন না। তবে বর্তমান সরকারের সময় এসব প্রকল্প নতুন করে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

এর আগে মৌলভীবাজারের লাঠিটিলায় বন কেটে সাফারি পার্ক নির্মাণের প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার এই প্রকল্পেও বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ থাকতে পারে।

একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রকল্পের একটি প্যাকেজে ওয়াসার বর্জ্য পুড়িয়ে সার তৈরির প্রস্তাব আছে, যা বাংলাদেশের বর্তমান জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়নযোগ্য নয়। আরেকটি প্যাকেজে মাটির গভীরে পাইপলাইন স্থাপনের প্রস্তাব আছে, যা একবার বন্ধ হয়ে গেলে মেরামতের কোনো উপায় নেই।

চট্টগ্রাম ওয়াসার অবস্থান

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা লিখিত প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, প্রকল্পের কার্যক্রম অনুমোদিত ডিপিপির নির্দেশনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অনুমোদনহীন প্যাকেজের বিষয়ে তিনি জানান, তিনটি প্যাকেজের আওতায় পয়োশোধনাগার, ফিকেল স্লাজ শোধনাগার এবং পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।

তিনি আরও দাবি করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এতে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি নেই। বরং এটি পরিবেশ দূষণ রোধ করে স্বাস্থ্যসম্মত নগরী গঠনে সহায়ক হবে।

গভীর পাইপলাইনের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই, আর হলেও তা মেরামতযোগ্য।

চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের এই প্রকল্পটি বর্তমানে নানা বিতর্ক ও জটিলতার মধ্যে রয়েছে। ব্যয় বৃদ্ধি, নিয়ম ভঙ্গ, অনুমোদনহীন কার্যাদেশ প্রদান এবং পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির কারণে এটি এখন আলোচনার কেন্দ্রে। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী হওয়ায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি দ্রুত এ বিষয়ে স্বচ্ছ ও কার্যকর সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে এই প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ আরও বাড়তে পারে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে পারে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা প্রকল্পটি পুনরায় মূল্যায়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

 

সুত্র : আমারদেশ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

Tags

ChatGPT Icc T20 অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ আপিল বিভাগে স্থগিত ইসরায়েলি হামলা এইচএসসি কোটা আন্দোলন গণতন্ত্র গাজা গ্রেপ্তার ১২ চট্টগ্রাম চৌরাস্তা বাজার জাতীয় ঐক্য ড. ইউনূস ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমান ত্রিশাল দুর্নীতি নাহিদ ইসলাম নির্বাচন পাকিস্তান প্রধান উপদেষ্টা প্রশাসনিক সংস্কার প্রাথমিক বিদ্যালয় ফিলিস্তিন বাংলাদেশ বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি ভারত ময়মনসিংহ মানবাধিকার মুসলিম উম্মাহ মুহাম্মদ ইউনূস রাজনীতি রাজনৈতিক দল শিল্পায়ন শেখ হাসিনা সচিবালয় সিলেটে কারফিউর মধ্যেও থেমে নেই চিনি চোরাচালান সুশাসন সেনাবাহিনী স্থানীয় সংবাদ ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়াল খেলাপি ঋণের পরিমাণ

পুরাতন খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর