জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। ঘোষণাপত্র প্রকাশ, সংবিধান সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সরকার সবার মতামতের ভিত্তিতে এগোবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
তিনি বলেন, “বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে আলোচনা করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা ছিল ৩১ ডিসেম্বর। তবে সরকার মনে করছে, বৃহৎ প্রক্রিয়ার বাইরে শিক্ষার্থীদের এককভাবে ঘোষণাপত্র দেওয়া জাতীয় ঐক্যের পরিপন্থী হতে পারে। তাই আমরা দায়িত্ব নিয়েছি সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে।”
সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা:
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। উপদেষ্টা জানান, “ঘোষণাপত্রের দুটি অংশ থাকবে— এক, কেন এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে এবং দুই, রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত থাকা জরুরি।”
মাহফুজ আলম আরও বলেন, “বিএনপি তাদের দীর্ঘ ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের স্বীকৃতি দাবি করেছে। আমরা চাই সকল রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের অবদানও সেখানে অন্তর্ভুক্ত হবে। কেউ প্রস্তাবনা দিতে চাইলে তা গ্রহণ করা হবে। এটাই হবে একটি অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া।”
সংবিধান সংস্কার নিয়ে আলোচনা:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবিধান সংস্কারের দাবি সম্পর্কে তিনি বলেন, “১৯৭২ সালে সংবিধান তৈরি হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো এর সমালোচনা করেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধান নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়ায় সবার প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে এবং আলোচনা ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
স্থানীয় সরকার ও নিরাপত্তা:
স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি জানান, “প্রশাসকের মাধ্যমে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে সেবা প্রদান আরও কার্যকর হবে। পুলিশ ও আনসারের সংস্কার চলমান রয়েছে। তবে আমরা সময়সীমা নির্ধারণ করিনি। প্রশাসনিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নেও কাজ করা হবে।”
জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কার:
জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “নির্বাচন সংস্কার সাপেক্ষে হবে। কমিশনের প্রতিবেদন এ মাসেই পাওয়া যাবে। প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। তবে এই সিদ্ধান্ত তাড়াহুড়ো করে নেওয়া যৌক্তিক হবে না।”
সংস্কৃতি ও নিরাপত্তা:
৫ আগস্টের পর মাজার ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে হামলার ঘটনায় সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন মাহফুজ আলম। দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ:
প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, “আগামী বছরের শুরু থেকেই বই সরবরাহ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে দেরিতে বই সরবরাহের রেকর্ড থাকলেও এবারে সময়মতো বই পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”
বৈঠকে যানজট ও জলাবদ্ধতা সমস্যার দ্রুত সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।