এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি, নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে টাকা পাচার এবং ব্যাংক দখলের অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর অঞ্চল-১৫-এর অনুসন্ধানে ছয়টি ব্যাংকে তাঁদের নামে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা জমা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে চারটি ব্যাংক সরাসরি এস আলম গ্রুপের মালিকানায় ছিল, এবং আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের নামে ব্যাংক হিসাবগুলোতে ২০২০ সাল থেকে ৮৩ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা জমা হয়েছে, যার অধিকাংশই ঋণ হিসেবে জমা হওয়ার পর দ্রুত তুলে নেওয়া হয়েছে। এটি অর্থ পাচারের কৌশল হতে পারে বলে কর কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন। কোম্পানির বাৎসরিক টার্নওভার মাত্র ৪০০ কোটি টাকা, যা ব্যাংক হিসাবগুলোর বিপুল লেনদেনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
এনবিআরের তদন্তে আরও জানা গেছে, সাইফুল আলমের ভাই আবদুল্লাহ হাসানের ব্যাংক হিসাবেও ১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা জমা রয়েছে। কর বিভাগ ইতিমধ্যে এস আলম পরিবারের ব্যাংক হিসাবগুলো তলব করেছে এবং কর ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। এছাড়া, চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এস আলম গ্রুপের ১৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির তদন্ত করছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর, এস আলম গ্রুপের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়। ব্যাংক দখলসহ নানা আর্থিক অপরাধের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে ছয়টি ব্যাংকের পুরনো পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে।
সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, বিগত সরকারের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুটপাট হয়েছে এবং এস আলম গ্রুপ এসব সুযোগ নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে। তিনি জোর দেন, কর ফাঁকির তদন্তের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ কমবে।
/প্রথমআলো