কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে পতন হয়েছে স্বৈরাচার সরকারের। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন স্তরে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ১৯৭১-এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে নতুন একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে, যা হলো জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি জানান। তার এই দাবির পর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে বলছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রক্রিয়ায় সবার মতামত এবং দাবির গুরুত্ব থাকা উচিত। আযমী তার নিজস্ব মতামত দিয়েছেন এবং এটি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করা সরকারের বিবেচনার বিষয়। তবে অন্যদিকে, অনেকেই বলছেন জাতীয় সংগীত দেশের আবেগের একটি বড় অংশ, তাই এর পরিবর্তন কেন দাবি করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। দেশের ভাবমূর্তি, লিঙ্গবৈষম্য দূর করা, অথবা ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করার উদ্দেশ্যে জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া: ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়া তাদের জাতীয় সংগীতের একটি ভিন্ন সংস্করণ গাইতে শুরু করে। নতুন সংস্করণে “ইয়াং অ্যান্ড ফ্রি” শব্দের পরিবর্তে আদিবাসীদের সুদীর্ঘ ইতিহাসকে সম্মান জানাতে নতুন শব্দ যোগ করা হয়।
জার্মানি: সমতা বিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টিন রোজে-ম্যোরিং জাতীয় সংগীতে লিঙ্গ সমতা আনার জন্য ‘ফাটারল্যান্ড’ শব্দটি পরিবর্তন করে ‘হাইমাট’ শব্দ যোগ করার প্রস্তাব করেন। যদিও চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে মনে করেন জাতীয় সংগীতে পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।
অস্ট্রিয়া: ২০১২ সালে অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংগীতে লিঙ্গ সমতা আনার জন্য ‘ছেলেরা’ শব্দের পরিবর্তে ‘মেয়েরা এবং ছেলেরা’ শব্দ যোগ করা হয়।
কানাডা: কানাডা তাদের জাতীয় সংগীতে লিঙ্গ নিরপেক্ষতা আনতে “তোমার সব ছেলেরা” শব্দের পরিবর্তে “আমরা সবাই” শব্দ ব্যবহার শুরু করে।
নেপাল: ২০০৮ সালে নেপাল রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে। এর আগে ২০০৭ সালে তারা তাদের জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করে নতুন একটি গান গ্রহণ করে, যেখানে রাজতন্ত্রের প্রশংসা ছিল না।
আফগানিস্তান: আফগানিস্তানে তালেবান শাসনামলে কোনো জাতীয় সংগীত ছিল না। পরে ২০০২ সালে পুরোনো জাতীয় সংগীত ফিরিয়ে আনা হয়। ২০০৬ সালে তৎকালীন কারজাই সরকার জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনে।
রুয়ান্ডা: গণহত্যা পরবর্তী রুয়ান্ডা ২০০১ সালে একটি নতুন জাতীয় সংগীত গ্রহণ করে, যা দেশটির ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের আগের দুটি জাতীয় সংগীত থেকে অংশ নিয়ে একটি নতুন সংগীত তৈরি করে। এটি আফ্রিকান ও ইংরেজি ভাষায় লেখা, যেখানে বর্ণবাদ আমলের কিছু অংশও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
রাশিয়া: ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন পুরোনো সোভিয়েত জাতীয় সংগীত ফিরিয়ে আনেন, তবে গানের কথায় পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৯০-এর দশকে গৃহীত সংগীতে কোনো কথা ছিল না, যা অ্যাথলিটদের জন্য উদ্বুদ্ধকারী ছিল না।
এতসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয় যে, জাতীয় সংগীতের পরিবর্তন কোনো দেশের সংস্কার প্রচেষ্টার অংশ হতে পারে এবং এটি বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ঘটতে পারে।