টানা বৃষ্টি এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একটি বড় অংশ হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে, যার ফলে যানবাহন চালক এবং যাত্রীরা ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট শুরু হয় এবং সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যানজট অব্যাহত রয়েছে, এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও দীর্ঘ হচ্ছে। যানবাহন চলাচলে ধীরগতি তৈরি হওয়ায় পুরো সড়কজুড়ে ব্যাপক যানজট দেখা দিয়েছে।
মহাসড়কের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নবগ্রাম রাস্তার মাথা থেকে চৌদ্দগ্রাম বাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এ অবস্থায় যানবাহনগুলো খুব ধীর গতিতে চলতে বাধ্য হচ্ছে, যা এই দীর্ঘ যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু কিছু স্থানে পানি এতটাই বেশি যে, হাঁটুপানি পাড়ি দিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।
পরিবহন চালক জহির আলী জানান, “কালির বাজারের পর থেকে সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। সড়কজুড়ে হাঁটুপানি জমে আছে, যা গাড়ি চালানোকে অত্যন্ত কষ্টকর করে তুলেছে। পানি জমে থাকায় যানবাহনের গতি অনেক কমে গেছে এবং সেই কারণে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “গাড়ি চালানোর সময় পানির কারণে ঝুঁকি থাকে, এবং গাড়ির যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।”
মহাসড়কের এই পরিস্থিতি স্থানীয় জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকেও প্রভাবিত করছে। কাজের উদ্দেশ্যে বাইরে বের হওয়া মানুষজনকে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া, পণ্যবাহী যানবাহনের দেরি হওয়ায় ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
মিয়া বাজার হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম লোকমান হোসাইন জানান, “টানা বৃষ্টির ফলে মহাসড়কের কিছু অংশে পানি জমে গেছে, যা যানবাহন চলাচলে ধীরগতি সৃষ্টি করেছে। এই ধীরগতির কারণে দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “হাইওয়ে পুলিশ যানজট নিরসনের জন্য কাজ করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পানি না কমা পর্যন্ত পুরোপুরি যানজট মুক্ত করা সম্ভব নয়।”
এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কাজ করছে। তবে, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এবং পানি দ্রুত না নামলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি এবং যানজট মুক্ত সড়ক প্রত্যাশা করছেন, কারণ এই দীর্ঘ যানজট এবং সড়কে জমে থাকা পানি তাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি করছে।
চৌদ্দগ্রাম এলাকায় এই ধরনের বন্যা পরিস্থিতি নতুন কিছু নয়। প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টি এবং ঢলের কারণে মহাসড়ক ও আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। তবে এ বছর পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে, যা স্থানীয় জনগণ এবং যাত্রীদের জন্য বড় ধরনের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।