বাংলাদেশে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ভারতীয় সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নিজেদের অবস্থান আরও কঠোর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, সম্প্রতি দুইটি ঘটনায় বিজিবি ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কার্যক্রমে বাধা দিয়েছে, যা সীমান্তে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
প্রথম ঘটনাটি ঘটে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর সীমান্তে। গত রোববার, ৫ জন ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত দিতে বিজিবি অস্বীকৃতি জানায়। এই ঘটনার ফলে সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং পরিস্থিতি বেশ তীব্র হয়ে ওঠে।
এরপর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগাম ইউনিয়নের হাড়িপাড়া সীমান্তে বুধবার একটি নতুন ঘটনা ঘটে। বিএসএফ সেখানে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে শূন্যরেখা বরাবর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করছিল। স্থানীয়দের মাধ্যমে এই তথ্য পেয়ে বিজিবি তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে উপস্থিত হয় এবং কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে বাধা দেয়।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, হাড়িপাড়া সীমান্তের ৮ নম্বর আন্তর্জাতিক পিলারের ২৩ থেকে ২৬ নম্বর সাব-পিলার অংশে বিএসএফ আকস্মিকভাবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করে। স্থানীয়দের নজরে আসার পর বিজিবি বিষয়টি জানে এবং দ্রুত সেখানে পৌঁছে কাজে বাধা দেয়। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ভারতীয় শ্রমিকরা গর্ত করে লোহার পিলার বসিয়ে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি শুরু করেন, এবং এসময় বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশ দিকে অস্ত্র তাক করে টহল দেয়। তবে, বিজিবি ও স্থানীয় গ্রামবাসীদের বাধার মুখে ভারতীয়রা কাজ বন্ধ রেখে পিছু হটে।
রংপুর ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম আল দীন জানান, আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন ভেঙে সীমান্তের শূন্যরেখা বরাবর বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা ব্যর্থ করেছে বিজিবি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিজিবি-বিএসএফের ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় এবং নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার বিজিবি ‘ভুলক্রমে’ বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করা ৫ ভারতীয়কে আটক করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে কয়েক দফা পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, তবে বিজিবি ভারতীয়দের ফেরত দিতে রাজি হয়নি। এই ঘটনায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়।
এই দুটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজিবি নিজেদের অবস্থান কঠোর করেছে এবং সীমান্ত আইন রক্ষায় তৎপর রয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তের শূন্যরেখা বরাবর কোনো ধরনের অবৈধ নির্মাণ কাজে বিজিবি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। এছাড়া, সীমান্ত এলাকায় যেকোনো অনুপ্রবেশ বা অবৈধ কার্যক্রম রোধ করতে বিজিবি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।