ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তিনটি হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ২২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে আছেন সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, এবং বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
মামলাগুলো সোমবার, ১৯ আগস্ট, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা হয়। বিচারক মামলাগুলোর মধ্যে দুটি মিরপুর মডেল থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন এবং অন্য মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্তৃক তদন্তের নির্দেশ দেন।
প্রথম মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়, ঢাকা মহানগর উত্তরের ১১নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ কবির খানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রী আফসানা ইসলাম এই মামলাটি করেন। অভিযোগ অনুসারে, ৪ আগস্ট মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় আইডিয়াল স্কুলের সামনে ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়। তখন আব্দুল্লাহ কবির খান আহত ছাত্রদের সাহায্য করছিলেন। এসময় পুলিশের গুলিতে তিনি মারা যান, এবং অভিযোগে বলা হয় যে শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ এই গুলি চালায়।
দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করা হয় লিটন হাসান লালু ওরফে হাসান নামে এক ব্যক্তির হত্যার অভিযোগে। তার ভাই মিলন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এতে শেখ হাসিনাসহ ১৪৮ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয় যে, ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে লিটন হাসান অংশ নেন এবং পুলিশের গুলিতে তিনি আহত হন। পরে ৭ আগস্ট আগারগাঁও নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তৃতীয় মামলাটি দায়ের করেন তারিক হোসেনের মা, মোসা. ফিদুশি খাতুন। এতে শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগ অনুসারে, ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় তারিক হোসেন শেরেবাংলা নগর থানার সামনে রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট তিনি মারা যান। আদালত এই মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেয় এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলে।
এই মামলাগুলোর প্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে আরও আছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি হারুন-অর-রশীদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান (নিখিল), এবং বিভিন্ন মন্ত্রী ও উপদেষ্টা। মামলাগুলোর অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।