২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি, রাজধানীর পিলখানায় সংঘটিত হয়েছিল ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড, যা দেশের ইতিহাসে অন্যতম কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। এই ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং ১৭ জন বেসামরিক মানুষ। সেই ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ফজলে নূর তাপস এবং শেখ সেলিম সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা মনে করেন, স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে পুরো ঘটনার পেছনের সত্য বেরিয়ে আসবে, এবং এতে আরও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে আসবে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নিহতদের স্বজনরা এ দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর ট্র্যাজেডির ন্যায়বিচারের জন্য সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন, সেনা কর্মকর্তা শফিকের ছেলে আইনজীবী সাকিবুর, এবং বিডিআর কেন্দ্রীয় সুবেদারের ছেলে আব্দুল হান্নানসহ আরও অনেক স্বজন তাদের বক্তব্যে হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
রাকিন অভিযোগ করেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সেনা অফিসারদের হত্যা করিয়েছেন। তিনি বলেন, “১৫ বছর ধরে যেভাবে তদন্ত হয়েছে, তা আমরা মানি না। কারণ প্রধান হত্যাকারী তখন গণভবনে ছিলেন।” তিনি আরও দাবি করেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ফজলে নূর তাপস এবং শেখ সেলিম সরাসরি জড়িত। এছাড়াও, স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন হলে আরও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম প্রকাশ পাবে।
সেনা কর্মকর্তা কর্নেল শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিবুর বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিটিতে সেই সময় কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন। তিনি জানান, যে তদন্ত রিপোর্টটি প্রথমে প্রস্তুত করা হয়েছিল, তা তিনবার সংশোধন করার পর মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছিল। তিনি সেই প্রতিবেদনের অপ্রকাশিত অংশ প্রকাশের দাবি জানান।
নিহতদের স্বজনরা সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, ২০০৯ সালের পিলখানা ট্র্যাজেডিকে “বিডিআর বিদ্রোহ” না বলে “বিডিআর হত্যাকাণ্ড” বলতে হবে। তারা অভিযোগ করেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভারতের হাত ছিল এবং এ ঘটনার প্রকৃত সত্য ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন গল্প প্রচার করা হয়েছিল।
২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়ায় ৮৪৬ জন বিডিআর জওয়ানকে অভিযুক্ত করা হয়, যাদের মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলার পরবর্তী পর্যায়ে, হাইকোর্ট ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন, এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।