ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটময়। ব্যাংকটির শতাধিক কর্মকর্তা সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে একটি চিঠি দিয়েছেন, যেখানে তাঁরা পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এই চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেন, পরিচালনা পর্ষদ এবং কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যাংকের তহবিল ব্যাপকভাবে লুটপাট হয়েছে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের চেয়েও ভয়াবহ। এর ফলে ব্যাংকটির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে এবং জনগণের আস্থা হ্রাস পেয়েছে।
চিঠিতে ব্যাংকের কর্মকর্তারা ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করা এবং এর হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা উল্লেখ করেছেন যে, নতুন পরিচালনা পর্ষদ সৎ, দক্ষ এবং ইসলামী ব্যাংকের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত হতে হবে, যাতে ব্যাংকের সব অংশীদারদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয় এবং আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান সংকটের মূল কারণ হলো ২০১৭ সালে নেওয়া একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যেখানে বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকার ইসলামী ব্যাংককে ‘জামায়াতমুক্ত’ করার উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয় এস আলম গ্রুপকে। তৎকালীন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সহায়তায় মালিকানা পরিবর্তন সম্ভব হয়। এর পরবর্তী সময়ে ব্যাংক থেকে সাড়ে সাত বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে। এই অর্থ ব্যাংকের মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশের সমান। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তাঁর পরিবারের সদস্য ও কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে বিভিন্ন নামে-বেনামে এই অর্থ তোলা হয়েছে। তোলার সময় কোনো নিয়ম-কানুন মানা হয়নি, যা ব্যাংকটির আর্থিক স্থিতিশীলতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
এসব তহবিলের অপব্যবহারের ফলে ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে তারল্য সংকটে ভুগছে। ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদামতো তারল্য জমা রাখতে পারছে না এবং প্রতিদিন জরিমানা দিতে বাধ্য হচ্ছে। ব্যাংকটির এই সংকট উত্তরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদ্য সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বিশেষ ক্ষমতাবলে ‘টাকা ছাপিয়ে’ দেড় বছর ধরে ব্যাংকটিকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু, ব্যাংকের এই খারাপ অবস্থার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
ইসলামী ব্যাংকের বিপুল আর্থিক ক্ষতি ও লুটপাটের কারণে ব্যাংকটি সাধারণ মানুষের আস্থা হারাতে বসেছে, যা ব্যাংকের ভবিষ্যতকে আরও অন্ধকারময় করে তুলেছে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ব্যাংকটি পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। এজন্য তাঁরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নতুন পর্ষদ গঠনের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এ ছাড়া ব্যাংকটির পুনরুজ্জীবন এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই।